• ক্রিকেট

ক্রিকেটের সেরা দশ মানবিক খেলোয়াড়

পোস্টটি ১১৬১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

একজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় সমাজের একজন আদর্শবান মানুষ । তারকাখ্যাতি থাকে তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই । মানুষের কাছে তিনি প্রায়ই থাকেন ধরা ছোয়ার বাইরে। নাম , যশ ,খ্যাতির ভিড়ে তারা হয়ে ওঠেন অধরা । কিন্তু কিছু কিছু খেলোয়াড় বরাবরই থাকেন অন্যদের চাইতে ব্যতিক্রম। মানুষের দুঃসময়ে কিংবা দুর্যোগে তারাও সামিল হন সাধারণ মানুষের কাতারে । দুহাত প্রশস্ত করে মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিমগ্ন করেন । তারা হয়ে উঠেন অসাধারণের মধ্যেও অসাধারণ।ক্রিকেটার হিসেবে অনেক অর্থ উপার্জন করে থাকেন ক্রিকেটাররা । উপার্জনের পাশাপাশি দুহাত খুলে দান করতেও কার্পণ্য করেন না কেউ কেউ । আজকে রয়েছে এমন দশ ক্রিকেটারের নাম যারা ক্রিকেটকে ছাপিয়ে হয়েছেন মহানুভব মানুষ।

 

১.শচীন টেন্ডুলকার

ক্রিকেটার হিসেবে শচীন একজন কিংবদন্তী তেমনি দানশীল ও বটে । কিন্তু তিনি সবসময়ই চুপিসারে দান করেন । দান করে কখনো প্রচার করে বেড়ান না । যখন কোনো দুর্যোগ আসে চুপিসারে মানুষের পাশে গিয়ে দাড়ান তিনি । এছাড়া অভাব দুঃখীদের কখনো ফিরিয়ে দেন না তিনি । অপনালয় নামের একটি এনজিও রয়েছে তার শাশুড়ির নামে । যেখানে তিনি নিয়মিত দান করেন । এছাড়া বিভিন্ন সময় ক্যাম্পেইন করে অর্থ সংগ্রহ করে প্রায় ২৭২ টি বিদ্যালয়ের অভাবগ্রস্ত শিশুদের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি ।

 

২. স্টিভ ওয়াহ

কোলকাতার উদয়নে লেপ্রসি আক্রান্ত শিকশুদের পুনর্বাসনের জন্যে স্টিভ ওয়াহ যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন তার জন্যে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি । নিজের দেশ থেকে বহু ক্রোশ দূরে তার এই মহানুভবতা তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায় । তিনি একাই ৩০০ প্রতিবন্ধী শিশুদের দায়িত্ত্ব নিয়ে ফাদার তেরেসা হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন । এছাড়া দুস্থদের সাহায্যার্থে তিনি ভারতে স্টিভ ওয়াহ ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেন । এই ফাউন্ডেশনের প্রধান লক্ষ্য দুস্থ মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের কে সাহায্য করা ।

৩. গ্লেন ম্যাকগ্রা

গ্লেন ম্যাকগ্রার স্ত্রী জেনি ৩১ বছর বয়সে ব্রেস্ট ক্যান্সারের শিকার হন । তারপর ম্যাকগ্রা গড়ে তোলেন ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন । যেখানে ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদের সাহায্য করা হয় ।অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এই ফাউন্ডেশন যেখানে প্রায় ৩৩০০০ ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদের সহযোগিতা দেওয়া হয় । তার স্ত্রী বলেন “ গ্লেন এবং আমি মিলে এই প্রতিষ্ঠানটি এই জন্যেই গড়ে তুলেছি যেনো ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোনো রোগী বিনা চিকিৎসায় না থাকে । আমি প্রথমবার যখন আক্রান্ত হই তখন খুব বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হযেছিলো । একজন নার্স ই একমাত্র এই উপসর্গের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন । তাই এখানে এসে নির্দ্বিধায় যে কেউ চিকিৎসা নিতে পারবেন “

 

৪.শহীদ আফ্রিদি

দানবীর হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদির । পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরান খানের পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনিও প্রতিষ্ঠা করেছেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান । পাকিস্তানের গণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা আর শিক্ষার জন্যে তিনি অনেক আগে থেকেই দান করে আসছেন । এছাড়া যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাড়িয়ে মানুষকে সাহায্য করেন । দুস্থ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্যে তিনি হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন । এছাড়া প্রসূতি মায়েদের জন্যে তিনি আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন ।এছাড়া সম্প্রতি করোনা মহামারীতে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন শুরু থেকেই ।মানুষকে সাহায্য করার লক্ষে তিনি ফান্ড সংগ্রহ করছেন আপাতত ।

 

৫.যুবরাজ সিং

হার্ড হিটার যুবরাজ সিং একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ক্রিকেটের চাইতে দাতব্য কাজে বেশি মনোযোগী ছিলেন । এছাড়া তিনি ক্যান্সার জয় করে মৃত্যুকে হারিয়ে দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে । ক্যান্সার প্রতিরোধ আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিতি থেকে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেন । এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন । এছাড়া

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্যে তিনি দান করে আসছেন ।

 

৬.মুত্তিয়া মুরালিধরন

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিন বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরন । ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যেমন জনপ্রিয় তেমনি দানশীল ব্যক্তি হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে তার । ২০০০ সালের দিকে “ ফাউন্ডেশন ফর গুড “ প্রতিষ্ঠা করেন । এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিলো প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্য ,শিক্ষা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা । এছাড়া তিনি ২০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট নিয়ে তৈরি করছেন বিশাল স্পোর্টস কমপ্লেক্স , যেখানে আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকবে এবং প্রবীণদের জন্যে থাকবে বৃদ্ধাশ্রম । এছাড়া বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন তিনি ।

 

৭.মাহেলা জয়াবর্ধনে

গ্লেন ম্যাকগ্রা ও ইমরান খানের মতো তিনিও রয়েছেন এই কাতারে যারা ক্যান্সার নির্মূল করার জন্যে কাজ করছেন । মরণঘাতী এই রোগ প্রিয়ুজন কেরে নেওয়ার যে যন্ত্রণা দেয় ,সেটি মাহেলা জয়াবর্ধনকে খুব ব্যথিত করে যখন তার আপন ভাই ক্যান্সারে যুদ্ধ করে মারা যান । এছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে অভাবগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে । একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিনি শ্রীলঙ্কায় প্রতিষ্ঠা করছেন ৭৫০ বেডের ক্যান্সার হাসপাতাল ।

 

৮.রিকি পন্টিং

ক্যান্সার নির্মূল আন্দোলনে রিকি পন্টিংয়ের নাম ও রয়েছে । রিকি পন্টিং ফাউন্ডেশন অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করছে । এছাড়া সিডনি শিশু হাসপাতালের এক সেমিনারে অনকোলজি বিভাগের সকল রোগীদের সঙ্গে দেখা করে তাদেরকে প্রাণবন্ত করেন তিনি । সেদিন সেখান থেকে ফেরার পর থেকে তিনি তরুণ ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন । এছাড়া রিকি পন্টিং ফাউন্ডেশন অভাবগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

৯. ইমরান খান

ইমরান খান একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ক্রিকেট ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেণ । এছাড়া তিনি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্যে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন বিশেষ করে তার নিজের দেশের মানুষের জন্যে । তার মায়ের নামে তিনি একটি ফাউন্ডেশন খুলেছেন যেটি মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রধান করে থাকে ।পরে এটিকে হাসপাতালে রূপান্তরিত করেন তিনি । দাতব্য কাজের জন্যে তিনি প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছিলেন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে । এছাড়া তিনি পিছিয়ে পড়া মানুষের শিক্ষার জন্যে একটি টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।

 

১০. ইয়ান বোথাম

ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত ইয়ান ক । আগ্রেসিব মানসিকতার ক্রিকেটার হলেও একজন মানবিক মানুষ তিনি । একবার পায়ের আঙ্গুলে চোট পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন চিকিৎসা নিতে । সেখানে ভুল করে শিশুদের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন তিনি । এবং জানতে পারেন সেখানের অধিকাংশ শিশু আর অল্প কিছুদিন বেঁচে থাকবে । যেটি প্রচন্ডভাবে ধাক্কা দেয় তাকে এবং তিনি ক্যান্সার হসপিটাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন তিনি । এছাড়া তিনি মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের সাহায্য করেছেন যখন প্রয়োজন পড়েছে ।এছাড়া তিনি লিকেমিয়া গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে লিউকেমিয়া সেন্টারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ।