• ক্রিকেট

দ্য গেইম অব মিরাকল...

পোস্টটি ২৭৮৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেট, আপনি কি বলবেন সেটাকে। আবেগ নাকি ভালবাসা। আসলে ক্রিকেট হলো দু'টোর সংমিশ্রণ। যখন আপনার প্রিয় দল কোনো ম্যাচ হেরে যায় তখন আপনি আবেগতাড়িতভাবে ভাবে বলেন যে আপনি আর খেলাই দেখবেন না। কিন্তু আবার ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসার কারণে আপনি খেলা দেখতে টিভি সেটের সামনে বসবেন। যখন দল জিতে আপনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। কিন্তু এই ভালবাসার ক্রিকেটে এমন কিছু ম্যাচ আছে যেগুলোর ফলাফল হওয়ার কথা ছিল এক রকম কিন্তু হয় অন্যরকম। লাইক আ মিরাকল।


১৯৯৯ বিশ্বকাপ, সেমিফাইনাল আর ভেন্যু এজবাস্টন। মুখোমুখি দুই পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া আর সাউথ আফ্রিকা। একদিকে গিলি, পন্টিং, ওয়াজ ব্রাদার্স, বেভান, মুডি, ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রা আরেকদিকে গিবস, ক্যালিস, রোডস, ক্লুজনার, পোলক, বাউচারের মতো ভয়ংকর সব প্লেয়াররা৷ ২১৪ রানের টার্গেটে ব্যাটে নাম সাউথ আফ্রিকা। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে কাভার আর লং অফ দিয়ে চার মেরে নিজেদেরকে জয়ের কাছে নিয়ে গেলেন ক্লুজনার, তৃতীয় বল ডট আর চতুর্থ বলে ডোনাল্ডের খেপাটে দৌড়ে রান আউট। ফলাফল ম্যাচ ড্র। সেই সময় সুপার ওভারের সিস্টেম ছিলনা। আর তারজন্য রান রেট বিবেচনায় ফাইনালে যায় অস্ট্রেলিয়া।

GettyImages-53335839-e1565180284127২০০৫, এজবাস্টন। চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামলো অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিংয়ে জাস্টিন ল্যাঙ্গার আর ম্যাথু হেইডেন। এক অদ্ভুত সুন্দর ইনিংসের শুরু, জাস্টিন ল্যাঙ্গারের অফের দিকে মারা চারগুলো যেন এক একটা ব্যাটিং কাব্য। কিন্তু না দলীয় ৪৭ রানেই থামতে হলো তাকে, ফ্লিনটফের বলে বোল্ড। নামলেন দ্যা পান্টার অর্থাৎ রিকি পন্টিং কিন্তু প্যাভিলিয়নে ফিরলেন শূন্য রানে। তারপর মার্টিন, ক্লার্ক, কেটিচ, গিলক্রিস্ট, গিলেস্পি, ওয়ার্ন সবাই ব্যর্থ। ২২০ রানে ৯ উইকেট শেষ। ২২ গজে তখন ব্রেট লি আর ক্যাসপ্রোউইচ। তারপর শুরু আরেক ক্রিকেটীয় কাব্য লেখা। সেদিন সেই দুইজনের ব্যাটিং দেখে সবাই ভেবেছিলো এজবাস্টনের ইতিহাস সেদিন অস্ট্রেলিয়াই লেখবে, কিন্তু না সে আর হলো না। ব্রেট লি পারলো না নায়ক হতে। ৩ রান আগে থেমে গেলো কাব্য লেখা। হার্মিসনের বলে প্যাভিলিয়নে ফিরে যায় ক্যাসপ্রোউইচ। এশেজের এই ম্যাচকে বলা হয় গ্রেটেস্ট ম্যাচ অফ এশেজ হিস্টোরি।


STOKES2বিশ্বকাপ ২০১৯; ফাইনাল- লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ওল্ডেস্ট অব দ্য হিস্টরী। '৯৯ এর পর ক্রিকেট সেবার ফিরেছিলো নিজের আঁতুড়ঘরে। ফাইনাল ম্যাচ, ৩০ হাজার দর্শকে ঠাঁসা গ্যালারি। একদিকে স্বাগতিক ইংল্যান্ড আরেকদিকে ব্ল্যাক ক্যাপস। ২৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে বোল্টের স্লোয়ার বলকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে মাঠ ছাড়া করলেন স্টোক্স। স্টোক্স তখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন কাপের নেশায়। এরপরের বল ফুলটস এবং ডিপ মিড উইকেট দিয়ে আরেকটা ছক্কা। দুই বলে দরকার তখন তিন রান। ফিফটি - ফিফটি মোমেন্ট। ওভারের পঞ্চম বলে স্টোকস দুইরান নেয়ার চেষ্টা করলেন কিন্তু একরান নিতে পারলেন আরেক রান নেয়ার সময় আউট হয় আদিল রশিদ। শেষ বল দুই রান, স্ট্রাইকে স্টোক্স, আবারো দুই রান নেয়ার চেষ্টা কিন্তু পারলেই একরান নিতে ওইদিকে আউট হলেন উড। ফলাফল ম্যাচ টাই। এরপর সুপার ওভার, সেখানেও টাই এবং নাটকীয় ভাবে শেষ বল কিন্তু সেই রান আউট। শেষে ম্যাচের ফলাফল আনা হলো বাউন্ডারি হিসেবে, চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
---

download (1)২০১৯, হেডিংলি। ১৯৮১ সালের ইয়ান বোথাম সেদিন ফিরেছিলেন হেডিংলিতে সাথে গ্রাহাম ডিলি। বিখ্যাত ১১৭ রানের জুটি সেদিন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে হেডিংলিতে মিরাকল সৃষ্টি করেছিল। হ্যাঁ তারা ফিরেছে তবে বোথাম ফিরেছে স্টোকস রুপে আর গ্রাহাম ডিলি ফিরেছে জ্যাক লিচ হিসেবে। এইবার চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে ইংল্যান্ড। টার্গেট ৩৫৯। শুরুতেই ব্যর্থ দুই ওপেনার বার্নস এন্ড রয়। তারপর রুট আর ডেনলি পার্টনারশিপ স্বপ্ন দেখায় জয়ের। কিন্তু দলীয় ১৪১ রানে নিজের হাফ-সেঞ্চুরি করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ডেনলি। আসেন স্টোকস এবং কিছুক্ষণ পরেই আউট হন রুট। এরপর একে একে বাইশ গজ থেকে ফিরেন বেয়ারস্টো, বাটলার, ওকস, আর্চার, ব্রড। ২৮৬ রান ৯ উইকেট। ক্রিজে আসেন এক চশমা পরা প্লেয়ার, নাম জ্যাক লিচ। বারবার হেলমেটের ফাঁক দিয়ে চশমা বের করে পকেটের থেকে চশমা মোছার রুমাল নিয়ের চশমা মুছছিলেন। বিপরীত প্রান্তে ঠাঁই দাড়িয়ে আছে বেন স্টোক্স। জয়ের জন্য রান বেশি নেই তখন। টেস্ট মেজাজকে পুরোপুরি ওয়ানডে মেজাজে নিয়ে গিয়েছেন তখন। মোটামুটি সব বলকেই বাউন্ডারি ছাড়া করছেন। ড্রেসিং রুমে সেদিন জাস্টিন ল্যাঙ্গার আছেন, যিনি ছিলেন সেই ২০০৫ এর গ্রেটেস্ট টেস্টে। পাশে বসা ছিলেন ইঞ্জুরিতে থাকা স্টিভেন স্মিথ। ল্যাঙ্গারের চোখে তখন এজবাস্টনের সেই হারের প্রতিশোধ এর ছবি ঘুরছে। মাঠে একদিকে জ্যাক লিচ ১০ বলে শূন্য রান নিয়েছেন। প্যাটিনসন, কামিন্সের আগুনের সব বল মোকাবেলা করছেন তিনি। আর বিপরীতে -

121.1 - Hazelwood to Stokes, FOUR runs

Short outside off, smoked through wide long-on! Rocks back and hammers this to the boundary - hundred for Stokes, but he's not interested. Work still to do, he nods his head and then returns to his crease।

আহ স্টোকস, একজন পুরোদস্তুর বোলারকে নিয়ে করে ফেললেন ক্যারিয়ারের সেরা সেঞ্চুরি। তবে নাটক এখনো বাকি। ৩৫৭ রান, ১২৪ ওভারে আসলে নাথান লায়ন। নিজের পঞ্চম বল করলেন, স্টোকস করলেন রিভার্স সুইপ, এবং বল গেল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ফিন্ডারের কাছে। এদিকে লিচ মহাশয় বের হয়ে গেলেন ক্রিজ থেকে আর ফিল্ডার থ্রো করলেন লায়নের কাছে। দ্যা গেইম চেঞ্জ ফর এনাদার টাইম এন্ড লায়ন মিসড ইট। লিচকে তখন স্রেফ এক পাড়ার ক্রিকেটারের মতোই লাগছে। এর পরের বল স্টোকসের স্লগ সুইপ খেললেন, কিন্তু বল ব্যাট মিস করে লাগলো প্যাডে। আবেদন কিন্তু আম্পায়ারের না। এন্ড গেইম চেঞ্জ ফর দা ফাইনাল টাইম এন্ড দেয়ার ওয়াজ নো রিভিউ ফর অস্ট্রেলিয়া। বলটি মিডল স্ট্যাম্প আর লেগ স্ট্যাম্পে হিট করেছিলো। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় নি অজিদের। পরের ওভারের চতুর্থ বল, কামিন্স টু স্টোকস এবং কভার দিয়ে চার। হেডিংলিতে মিরাকল। এবার নায়ক বেন স্টোকস। ২০০৫ এ অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি পারেন নি কিন্তু ২০১৯ এ এসে ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস নায়ক হলেন। নিজেকে জানান দিলেন হেডিংলিতে। ড্রেসিংরুমের ডাস্টক্যানে লাথি মেরে আরেকবার আক্ষেপ করলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। স্টোকসের এই ইনিংস হাজার হাজার বছর ধরে ক্রিকেটীয় ইতিহাসে মাথা তুলে থাকবে।

এখানেতো অল্প কয়েকটা ম্যাচ। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে আরো অনেক এমন ম্যাচ রয়েছে। যেগুলো হওয়ার কথা ছিল একরকম কিন্তু ফলাফল হয়েছে ভিন্ন। তাই তো ক্রিকেটকে বলা হয় গেইম অব মিরাকল।