• এশিয়া কাপ ২০১৮
  • " />

     

    ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে

    ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে    

    মুশফিকের মতো ক্রিকেটার জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়

    সিনিয়র ক্রিকেটার, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিক ওজনটা বাড়িয়ে নিল আরেকবার। এ ইনিংসটা ভাল ক্রিকেটারের বৈশিষ্ট্য মনে করিয়ে দেয়। প্রথমে মিঠুনকে সমর্থন দিয়ে জুটি গড়া, এরপর প্রায় একা হাতে বাংলাদেশের স্কোরটা জেতা যায় এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এক কথায়- অসাধারণ। এরকম ক্রিকেটার যতো বেশি আপনার দলে থাকবে, আপনার জয়ের সম্ভাবনা ততো বেড়ে যাবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে মুশফিক যে তার সামর্থ্য-সক্ষমতা দেখাতে পারলো, এজন্য তাকে অভিনন্দন দিতেই হয়। 

    সঙ্গে মিঠুনের কথাও ভুললে চলবে না। প্রথম আক্রমণটা তো সে-ই করেছে। সে আউট হওয়ার পর মুশফিক পুরো দায়িত্ব নিয়েছে, বাংলাদেশের জয়ে কাল মুশফিকের অবদান সবচেয়ে বেশি। তবে মিঠুনের অবদানও অস্বীকার করার নয়। 

     

    মিঠুন যেখানে খেলছে সেখানেই থাক

    যে ব্যাটসম্যান যে পজিশনে খেলে, তাকে সেখানেই খেলানো উচিৎ। ওপরের দিকের একজন ব্যাটসম্যানকে সাতে নামিয়ে আপনি প্রতিদিন ক্যামিও আশা করতে পারেন না, এটা আগের লেখাতেই বলেছি। মিঠুন ঘরোয়াতে নিয়মিত পাঁচে খেলে, সে পাঁচে নেমে তার সামর্থ্য দেখিয়েছে। আশা করি মিঠুন দলে নিয়মিত হবে। তামিমের চোটটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে মিঠুন রান পেয়েছে বলে তাকে ওপেনিংয়ে নিয়ে আসাটা ঠিক হবে না। যে পজিশনে সে ভাল করেছে, তাকে সেখানেই খেলানো হোক। 

    পরিসংখ্যানে তামিম বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। তবে সে বাংলাদেশের শুধু না, এখন বিশ্বেরই অন্যতম সেরা ওপেনার। তার এমন চোট দুঃখজনক। আমরা অনেকদিন ধরে তামিমের যোগ্য সঙ্গী খুঁজছি। অনেকজনকে চেষ্টা করেছি, কাউকে পাওয়া যায়নি। এখন সে তামিমই খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। তবে তার জায়গায় যে-ই খেলবে, তার দায়িত্ব অনেক বড়। লিটন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন, ওয়ানডেতে এখনও প্রমাণ করতে পারেনি নিজেকে। তামিমের জায়গায় যেই খেলুক, মুমিনুল বা শান্ত- ওয়ানডেতে তারা নিয়মিত না। শান্তর তো অভিষেকই হয়নি। মুমিনুল দলে ফিরেছে অনেকদিন পর। যারা দলে আছে, আশা করি তারা করতে পারবে। তবে কাজটা কঠিন। 

     

    মাশরাফির বলে বোল্ড থারাঙ্গা/বিসিবি

     

    ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়ে যেন আর প্রশ্ন না ওঠে 

    তামিমের যেই সিদ্ধান্তটা বা যে কাজটা করেছে, ক্রিকেট ইতিহাসে কম সময়ই হয়েছে। ম্যালকম মার্শাল, গ্রায়েম স্মিথ, অনিল কুম্বলেকে দেখেছি আমরা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা প্রথম। অবিস্মরণীয় একটা ঘটনা হিসেবে মানুষ এটা মনে রাখবে। এর জন্য অনেক সাহস, আত্মনিবেদনের প্রয়োজন হয়। 

    তবে প্রশ্ন হচ্ছে, তামিম কোন কারণে নামলো? 

    আমরা এ জায়গায় নজর দিচ্ছি না। সবাই খুবই অনুপ্রাণিত, বিস্মিত। কেন নামতে হলো এটা বিশ্লেষণ করছি না। তামিম যখন নামে তখন বাংলাদেশের স্কোর ২২৯। একটা বল খেলেছে সে, বাংলাদেশের স্কোর গেছে ২৬১ পর্যন্ত। 

    গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের। এরপর সুপার ফোর, ফাইনাল। ধরা যাক, তামিম নামলো না, শ্রীলঙ্কার জন্য তখন স্কোরটা সহজ হয়ে যেতো। ধরা যাক, শ্রীলঙ্কা জিতেই গেল, বাংলাদেশের জন্য তখন আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটা বাঁচা-মরার হয়ে যেতো। এরকম পর্যায়ে খেলা কঠিন হয়ে যেত। 

    যেহেতু প্রথম ম্যাচ, বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছে, চাপটা শ্রীলঙ্কার ওপরই যাক। এরকম একটা অবস্থা নিশ্চিত করতেই কিন্তু তামিম নেমেছে। এরকম একটা কঠিন ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ দিতে হবে। তবে মূল ধন্যবাদটা অবশ্যই তামিমের প্রাপ্য, সে এভাবে নামতে না চাইলে এটা সম্ভব হতো না। 

    আর আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের যতো ভক্ত, সমর্থক- সবার জন্য একটা মাইলফলক। এরপর কোনো ভক্ত-সমর্থক-বিশ্লেষকদের যেন বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়ে কোনও প্রশ্ন না থাকে। 

     

    বোলিং ইউনিট দারুণ 

    ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৩৭ রানে জয় কিন্তু বিশাল। মুশফিক-তামিম-মিঠুনের কথা বলছি, দিনশেষে বাংলাদেশী বোলারদের কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে আটকে দিতে হয়েছে। মাশরাফি ভাই বরাবরের মতোই নেতৃত্ব দিয়েছেন বোলিংয়েও। মুস্তাফিজ-রুবেল-মিরাজ-সাকিব ভাল বোলিং করেছে। পুরো বোলিং ইউনিটটা দারুণ করেছে। ফিল্ডাররাও ভাল ছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দারুণ একটা দল। তারা ঠিক পথেই আছে।

     

    অভিজ্ঞতা বাজারে মেলে না 

    মালিঙ্গা এখনও খেলছে, তবুও সে কিংবদন্তি। একজন মালিঙ্গা একদিনে গড়ে ওঠে না, আর মালিঙ্গা হওয়া এতো সহজ না। এরকম প্রত্যাবর্তন মালিঙ্গা বলেই সে করতে পেরেছে। তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান নিয়ে। সে দলে ছিল না, তার মানে এই না যে সে খারাপ ক্রিকেটার। দলে নিশ্চয়ই ঝামেলা ছিল। সে অভিজ্ঞ। সে জানে, কিভাবে চাপ সামলাতে হয়। 

    মালিঙ্গা পেস, অ্যাকুরেসি, অ্যাকশন দিয়ে পৃথিবীর যে কোনও ব্যাটসম্যানকে ধোঁকা দিতে পারে। আর যেটা শিক্ষণীয়, অভিজ্ঞতা কিন্তু বাজারে মেলে না। অভিজ্ঞতার কাছ থেকে যেটা পাওয়া যায়, সেটা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। অভিজ্ঞতার মূল্যটা বুঝতে হবে। মালিঙ্গা এক বছরের জায়গায় দুই বছর পর দলে ফিরলেও এভাবেই ফিরে আসতো। 

     


    শাহরিয়ার নাফীস- বাংলাদেশের হয়ে ২৪টি টেস্ট, ৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।