• অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান
  • " />

     

    'পিংক টেস্ট' এবং একজন গ্লেন ম্যাকগ্রা

    'পিংক টেস্ট' এবং একজন গ্লেন ম্যাকগ্রা    

    তিন বছর বয়সী অ্যানা বাবার হাত ধরে খেলা দেখতে এসেছিল সিডনির মাঠে। মাথায় গোলাপি রঙের হেয়ারব্যান্ড, জুতোটাও গোলাপি। অ্যানার মতো প্রায় সবার গায়েই আজ ছিল গোলাপি রঙের পোশাক, মাথায় গোলাপি টুপি। বছর ঘুরে আবারো যে এসেছে ‘পিংক টেস্ট’! এবারো সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিনে গোলাপি রংয়ে ছেয়ে গেছে স্টেডিয়াম। ১০ 'জেন ম্যাকগ্রা ডে'তে প্রয়াত স্ত্রী জেন ম্যাকগ্রার ছবি নিয়ে সপরিবারে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আসলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা, তাঁর সাথে হাজারো দর্শক শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করল জেনকে।

     

     

     

    জেন ম্যাকগ্রা, অস্ট্রেলিয়ার স্তন ক্যান্সার সচেতনতার জগতে এক পথিকৃতের নাম। ৩১ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো ক্যান্সার ধরা পড়ে জেনের। এরপর অনেক ধরনের চিকিৎসাও নিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়েছেন মাত্র ৪২ বছর বয়সেই। মৃত্যুর আগে স্বামীর সাথে গড়ে তুলেছিলেন ‘ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন’। ২০০৫ সাল থেকে ‘টুগেদার উই ক্যান মেক আ ডিফারেন্স’ স্লোগানে পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়ে স্তন ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির কাজ শুরু করে সংগঠনটি।

     

     

    কিন্তু সাধারণ একটি সংগঠন কীভাবে হয়ে উঠল সিডনি টেস্টের প্রতীক? উত্তরটা পেতে ফিরে যেতে হবে ২০০৯ সালে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর শোকাচ্ছন্ন ম্যাকগ্রা সেই বছরের সিডনি টেস্টে জার্সিতে গোলাপি রিবন লাগিয়ে মাঠে নামেন। তাঁর দেখাদেখি পরের দিন দর্শকরাও পরে আসেন গোলাপি রঙের পোশাক। সেবার থেকেই সিডনি টেস্টকে ঘোষণা করা হয় ‘পিংক টেস্ট’ হিসেবে। সেই শুরু, আজ ১০ বছর হলো সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিন ‘জেন ম্যাকগ্রা ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে অস্ট্রেলিয়া।

     

    ‘জেন ম্যাকগ্রা ডে’ তে ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে মাঠের কর্মীর পোশাক, ব্যাটের স্টিকার থেকে স্টাম্পের রং, সবই হয়ে যায় গোলাপি। আক্ষরিক অর্থেই দিনটা ‘অল পিংক ডে’ তে রূপান্তরিত হয়। জেনের বিশাল বড় পোস্টার নিয়ে ‘জেন ম্যাকগ্রা স্ট্যান্ডে’ তাঁর ফাউন্ডেশনের কর্মীদের সাথে হাজির হয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। প্রতিবার এই দিনে দর্শকের থেকে প্রচুর অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে সংগঠনটি। এই পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার পরিবারকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে তারা, গড়ে তুলেছে ১১০ জন নার্সের একটি দক্ষ দল। তাঁরা প্রতি মাসেই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তরুণদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করেন। এবার সংগঠনটির লক্ষ্য প্রায় ৬ লাখ ডলার অনুদান ওঠানো। এরই মাঝে শুরু হয়ে গিয়েছে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুতি।

     

     

    অনুদান ওঠানোর ব্যাপারটাই সবচেয়ে বড় শঙ্কার কারণ ছিল সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালে। স্ত্রীর চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য মহিলাদের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করতে ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচীর মাঝেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। অসুস্থ জেনও কম কষ্ট করেননি, কেমোথেরাপির প্রচণ্ড কষ্টকে আড়ালে রেখেই হাসিমুখে অংশ নিয়েছেন বহু প্রচারণায়। ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে পরিচিতি পেতে থাকে তাদের কার্যক্রম, দেশ বিদেশের অনেক হাসপাতালও বাড়িয়ে দেয় সহায়তার হাত। জেনের মৃত্যুর পরে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক গুণে।

     

    আজ সিডনিতে বসেছে গোলাপি রঙের মেলা। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা জার্সিতে লাগিয়েছেন গোলাপি রঙের স্টিকার। এতকিছুর মাঝেই হয়তো ম্যাকগ্রা খুঁজে পাবেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া প্রিয়তমাকে। উপর থেকে জেন নিশ্চয়ই হাসিমুখে তাকিয়ে থাকবেন সিডনির মাঠের দিকে। দুজন মিলে ১২ বছর আগে যেই স্বপ্নের সূচনা করেছিলেন, তা তো পূর্ণ হয়েই গিয়েছে। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা…