• ক্রিকেট

সফল বাবাদের গল্প

পোস্টটি ১৮৯০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৯ বছরের ইতিহাসে মাত্র তিনজন গর্বিত টেস্ট খেলোয়াড় আছেন যাদের দুই ছেলে টেস্ট খেলেছেন। এই তিনজন হলেন ভারতের লালা অমরনাথ, নিউজিল্যান্ডের ওয়াল্টার হ্যাডলি এবং অস্ট্রেলিয়ার জিওফ মার্শ। এদের তিনজনকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

লালা অমরনাথ

ভারতের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের নাম লালা অমরনাথ। ১৯৩৩ সালে মুম্বাইয়ে শাসক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টেই ভারতের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের কীর্তি গড়েন লালা। ২৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে আর কোন শত রান না পেলেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার দ্বিশতও রয়েছে। তাঁর আরেক অমর কীর্তি তিনি ভারতের প্রথম টেস্টজয়ী অধিনায়ক। ১৯৫২ সালে দেশের মাটিতে তাঁর নেতৃত্বে ভারত প্রথম টেস্টে জয় পায়। পরবর্তীতে ভারতের নির্বাচক ও কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন।

লালা অমরনাথের দুই যোগ্য ছেলে মহিন্দর অমরনাথ আর সুরিন্দর অমরনাথ। মহিন্দর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের আরেক মহীরুহ হিসাবে। ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপজয়ী ভারতের ফাইনাল ও সেমিফাইনালের ম্যান অব ম্যাচ তিনি। ফাইনালে বল হাতে ১২ রানে ৩ উইকেট আর ব্যাটে ২৬ রানের সাথে সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে ২ উইকেট আর ব্যাটে ৪৬ রান। তাঁর ১১ টি টেস্ট সেঞ্চুরীর ৯টিই করেছেন উপমহাদেশের বাইরে যা সমকালীন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের থেকে তাঁকে আলাদা করে দেয়। ৬৯ টেস্টে ৪২.৫ গড়ে করেছেন ৪৩৭৮ রান। অমরনাথ পরিবারের আরেক সদস্য সুরিন্দর অমরনাথ বাবার মতই অভিষেক টেস্টে করেছেন শতরান। এখন পর্যন্ত এই কীর্তি গড়তে পারেন নি আর কোন বাবা ছেলে। প্রথম শ্রেনিতেও বাবার দেখানো পথে দ্বিশত করলেও টেস্টে পান নি আর কোন বলার মত অর্জন।

ওয়াল্টার হ্যাডলি

ডেল হ্যাডলি আর বিশ্বখ্যাত সব্যসাচী ক্রিকেটার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির বাবা ওয়াল্টার হ্যাডলি। নিজে খেলেছেন ১১টি টেস্ট, করেছেন একটি শতরানও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ না হলে হয়ত আরও উজ্জ্বল হত আর পরিসংখ্যান। এই ছোট ক্যারিয়ারেই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে।

রিচার্ডের বড় ভাই ডেল খেলেছেন ২৬টি টেস্ট, নিয়েছেন ৭১টি উইকেট। পেস বোলার হলেও গতির চেয়ে বেশি ছিল নিয়ন্ত্রণ আর সুইং। হ্যাডলি পরিবারের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র স্যার রিচার্ড হ্যাডলি। প্রথম বোলার হিসাবে টেস্টে নেন ৪০০ উইকেট, তর্কাতিতভাবেই নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা সব্যসাচী খেলোয়াড়। মাত্র ৮৬ টেস্টে বল হাতে নিয়েছেন ৪৩১ উইকেট আর ব্যাটে করেছেন ৩১২৪ রান। জীবনের শেষ টেস্টে শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছেন ৫ উইকেট, শেষ বলে নিয়েছেন ম্যালকমের উইকেট। ১৯৯০ সালে ক্রিকেটে অবদানের জন্য তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

জিওফ মার্শ 

বিরল গর্বিত বাবাদের এই ছোটো ক্লাবের শেষ সদস্য জিওফ মার্শ। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর ছোট ছেলে মিচেলের মাথায় ব্যাগি গ্রীন তুলে দিয়ে এই ক্লাবে ঢুকে পড়েন তিনি।

 অস্ট্রেলিয়ান এই ডাকাবুকো ওপেনার নিজে ৩৩ টেস্ট আর ১১৭ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ১৩টি শত রানের সাথে অর্ধশত করেছেন ৩৭টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৫৫ রান। পাশাপাশি করেছেন ৩৩টি শতক। ১৯৮৭ সালের ওয়ার্ল্ড কাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়ার সফল সদস্য ছিলেন সিনিয়র মার্শ। খেলা থেকে অবসরের পর অস্ট্রেলিয়া দলের নির্বাচক ও কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন সফলভাবে। বিরল এক কীর্তি গড়েছেন ১৯৮৭ তে খেলোয়াড় হয়ে আর ১৯৯৯ তে কোচ হয়ে বিশ্বকাপ জিতে।

দুই ছেলে শন মার্শ ও মিচেল মার্শ এখনও খেলছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। অভিষেক টেস্টেই শতরান করা শন ১৭ টেস্টে করেছেন ৩৭.৭২ গড়ে ১০৯৪ রান আর ২০১৫র ওয়ার্ল্ড কাপজয়ী দলের সদস্য মিচেলের সংগ্রহ ১৫ টেস্টে ৪৩৭ রান আর ২৫ উইকেট। বিশ্বকাপ জয়ী বাবা ছেলের একমাত্র জুড়ি তাঁরা। আশা করা যায় সম্ভাবনাময় এই দুই খেলোয়াড় তাদের ক্যারিয়ার অনেক দূর নিয়ে যাবেন। বাবার স্বপ্নকে ছাড়িয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবেন অন্য উচ্চতায়।