• ফুটবল

হেনড্রিক ইয়ুহানেস 'ইয়োহান' ক্রুইফ ওওএন : আমস্টারডামের দার্শনিক

পোস্টটি ১০৭৯২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

 

১.
আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী বিখ্যাত কোচ সিজার মেনত্তি একবার বলেছিলেন,

" ফুটবলের চারটা জেনারেশনের চারজন রাজা আছে,ডি স্টেফান,পেলে, ক্রুইফ ,ম্যারাডোনা।"

তবে ফুটবলের বাকি তিনজন রাজাও যেমন আলালের ঘরের দুলাল হয়ে জন্মগ্রহণ করেনি,তেমনি এই রাজাও আলালের ঘরের দুলাল হয়ে জন্মগ্রহণ করেনি।

সালটা ১৯৪৭, দুইবছর হয়েছে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও তখনও ইউরোপ জুড়ে যুদ্ধের ভয়াভহ চিত্র বিদ্যমান। ইউরোপ তখনও পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি।

এপ্রিল ২৫ নেদারল্যান্ডসের পূর্ব আমস্টারডামের হারমানোস কর্নেলিস ক্রুইফ ও পের্তোনেল্লা দম্পতির ঘর আলোকিত করে তাদের ২য় সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় হেনড্রিক ইয়ুহানেস "ইয়োহান" ক্রুইফ। কর্নেলিস ক্রুইফ ছিলেন একজন নিম্ন বর্গের শ্রমিক কিন্তু তিনি কখনও ইয়োহান কে তা অনুভাব করতে দেননি।তাদের বাড়ি থেকে ৫ মিনিটের দূরত্বেই ছিল আয়াক্স এর স্টেডিয়াম। ফুটবলের প্রতি কর্নেলিস ক্রুইফের গভীর অনুরাগ ছিল। সব সময় সে ইয়োহানকে ফুটবল খেলতে উৎসাহ প্রদান করত। ইয়োহান তাঁর স্কুল বন্ধু ও বড় ভাইর সাথে আমস্টারডামের পথে ঘাটে ফুটবল খেলত। তাঁর আইডল ছিল ডাচ ফুটবলার ফাস উইলক্স যে ড্রিবলার হিসেবে বেশ বিখ্যাত ছিল। ক্রুইফ ও তাঁর বন্ধুরা পাড়ার যে মাঠে ফুটবল খেলত,আয়াক্সের তরুণ দলের কোচ জেনি ভ্যান ডের বীন ঐ মাঠের পাশেই থাকত। তার চোখে ক্রুইফের ট্যালেন্ট ধরা পড়ে।সে ক্রুইফ কে কোনো ট্রাইল ছাড়াই আয়াক্স জুনিয়র টিমের যোগ দেওয়ার জন্য অফার করে।১৯৫৭ সালে তাঁর দশম জন্মদিনে ক্রুইফ আয়াক্সের তরুণ দলে যোগ দান করে।ক্রুইফ ভাল বেসবলও খেলত।১৯৫৯ সালে ঘটে যায় ক্রুইফের জিবনের সবচেয়ে কঠিনতম ঘটনা যখন তাঁর বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। বাবার মৃত্য তাকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করে।ক্রুইফে তাঁর ৫০তম জন্মদিনে বাবার মৃত্য সম্পর্কে বলেন,

"আমার বাবা মারা গিয়েছি যখন আমারা বয়স ছিল মাত্র ১২ ও তাঁর ৪৫।ঐ দিন থেকে আমার মনে হত আমিও ঐ বয়সেই মারা যাব, আমার হার্টেও গুরুত্বর সমস্যা ছিল তখন আমি ৪৫ এ পৌছলাম,আমি ভেবে ছিলাম 'এটাই সেই সময়।' শুধু মাত্র উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্য আমি বেঁচে আছি যা আমার বাবার সময় ছিল না ।"

বাবার মৃত্যুতে তাঁর ইচ্ছা পূরনের জন্য ক্রুইফ ফুটবলের প্রতি আরও উদগ্রীব হয়ে যায়। ১৫ বছর বয়সে সে বেসবল ত্যাগ করে পুরপুরি ফুটবলে মনোযোগী হলেন।এদিকে তাঁর মার পক্ষে পরিবার চালান মুসকিল হয়ে পড়লে যে আয়াক্সে ক্লিনার হিসেবে চাকুরী নেন।ক্রুইফের মা খুব কম সময়ের ভিতরেই আয়াক্সের একজন মাঠ পরিচর্যা কর্মী হেন্ক এন্জেলকে বিয়ে করেন। হেন্ক ক্রুইফের ফুটবল ক্যারিয়ারের পিছনে ব্যাপক অবদান রাখেন।

১৯৬৪ সালে ১৫ই নভেম্বর জিভিয়েভির বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে আয়াক্স মূল টিমের ক্রুইফের ডেবিউ হয়, ঐ ম্যাচে সে গোল করলেও আয়াক্স ৩-১ ব্যাবধানে হেরে যায়।১৯৬৪-৬৫ মৌসুম ছিল আয়াক্সের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে মৌসুম,তারা লিগে ১৩তম হয়ে মৌসুম শেষ করে ।লিগে ক্রুইফ ৯ ম্যাচে ৪ গোল করে।

শুরু হয় ফুটবলের নতুন একদিকের যাত্রা, ১৯৬৫,২৪ অক্টোবর, ডোর উইলস্ক্রাট র্স্টাকের বিপক্ষে দুই গোল করে আয়াক্সকে ২-০ এর সহজ জয় উপহার দেওয়ার পর, ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে আয়াক্সের মূল টিমের নিয়মিত একাদশে জায়গা করে নেন ক্রুইফ। ঐ শীতে ক্রুইফ ৭ ম্যাচে ৮ গোল করেন। ৬৬ সালের মার্চ মাসে ক্রুইফ তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাট্রিক করেন টেলস্টারের বিপক্ষে লিগ ম্যাচে। আয়াক্স ঐ ম্যাচটি ৬-২ ব্যাবধানে জয় লাভ করে।৪ দিন পর কাপ ম্যাচে ক্রুইফ ৪ গোল করে এবং ৭-০ গোলে জয় পায় আয়াক্স, দ্বিতীয় মৌসুমে ২৩ ম্যাচে ২৫ গোল করেন ক্রুইফ আর প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা জেতেন।

১৯৬৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৮ উয়েফা ইউরোর কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে হাঙ্গেরির বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের হয়ে ডেডিউ ক্রুইফের । ঐ ম্যাচে ক্রুইফ গোল করেও শেষ পর্যন্ত ২-২ সমতায় ম্যাচটি শেষ হয়।

১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে আয়াক্স আবারও লিগ জয় করে এবং কেএনভিবি কাপ ও জয় করে। এটা ছিল ক্রুইফের প্রথম "ডাবল"।লিগে ৩০ ম্যাচে ক্রুইফ ৩৩ গোল করে টপ স্কোরার হয়।সে ৪১ ম্যাচে ৪১ গোল করে মৌসুম শেষ করে।

ক্রুইফ ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে টানা ৩য় বারের মত লিগ জয় করে এবং ২য় বারের মত ডাচ ফুটবলার অফ দা ইয়ার নির্বাচিত হয়।১৯৬৯ সালে ক্রুইফ আবারও ডাচ ফুটবলার অফ দা ইয়ার নির্বাচিত হয়। ততদিনে পুরোদমে টোটাল ফুটবল ট্যাক্টিকস চালু , মিশেল এবং লেভকে নিয়ে আয়াক্সে তৎকালীন বিশ্বসেরা দলে পরিণত করে ক্রুইফ। ১৯৬৯ সালের ২৮ মে ক্রুইফ আয়াক্সের হয়ে তার প্রথম ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ঐ ফাইনালটা আয়াক্স এসি মিলানের কাছে ৪-১ গোলে হেরে যায়।

১৯৬৯-৭০ মৌসুমে ক্রুইফ ২য় বারের মত "ঘরোয়া ডাবল " জয় করে।১৯৭০-৭১ মৌসুমের শুরুতে ক্রুইফ দীর্ঘ মেয়াদী ইঞ্জুরিতে পড়ে যায়। ৩০ অক্টোবর ১৯৭০, পিএসভির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্রুইফ ইঞ্জুরি থেকে কামব্যাক করে।সে তাঁর ৯ নম্বর জার্সি না পরেই মাঠে নামে যা তাঁর অবর্তমানে জেরি মুরেন ব্যবহার করত।ঐ ম্যাচে সে ১৪ নম্বর জার্সি পরেছিল।আয়াক্স ম্যাচটি ১-০ ব্যবধানে জয় লাভ।ঐ সময় থেকে ক্রুইফ নিয়মিত ১৪ নম্বর জার্সি ব্যবহার শুরু করে। এমনকি ডাচ জাতীয় দলেও। আসলে ঐ সময় ১৪ নম্বর জার্সি আনকমন ব্যাপার ছিল।ম্যাচের মূল একাদশের সবাই সাধারনত ১ থেকে ১১ নম্বর জার্সিই ব্যবহার করত।

ক্রুইফের উপর " Nummer 14 Johan Cruyff" নামে একটি ডকুমেন্টারি আছে এবং নেদারল্যান্ডসে ভোটবাল ইন্টারন্যাশনালের Nummer 14 নামে একটা ম্যাগাজিন আছে।

১৯৭০ সালের ২৯ নভেম্বর, লিগ ম্যাচে এ জেড'৬৭ এর বিপক্ষে ক্রুইফ ৬ গোল করেন এবং আয়াক্স ৮-১ এর জয় লাভ করে।

স্পার্টা রটার্ডামের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে কেএনভিবি কাপের ফাইনাল জয়ের পরে, আয়াক্স প্রথম বারের মত ইউরোপিয়ান কাপ জয় করে।২ জুন ১৯৭১, লন্ডনে ফাইনালে তারা পানাটিয়াকোসকে ২-০ গোলে পারাজিত করে।

ক্রুইফ আয়াক্সের সাথে ৭ বছরের নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে। মৌসুম শেষে ক্রুইফ ডাচ ফুটবলার অফ দা ইয়ার ও ১৯৭১ সালের ইউরোপিয়ান ফুটবলার অফ দা ইয়ার( ব্যালন ডি'অর জেতে) হয়।

১৯৭২ সালে আয়াক্স ২য় বারের মত ইউরোপিয়ান কাপ জয় করে। ফাইনালে তারা ইন্টার মিলনকে ২-০ গোলে পরাজিত করে।দুটো গোলই ক্রুইফ করেছিল।এই ম্যাচ নিয়ে ডাচ পত্রিকা গুলোর হেডলাইনে লেখা হয় "টোটাল ফুটবলের সামনে ইতালির ডিফেন্সিভ ফুটবলের মৃত্য ঘোটেছে।"

সকার : দি আল্টিমেট ইনসাইক্লোপিডিয়ার মতে :" ক্রুইফ একাই শুধু ইতালিয়া ইন্টার মিলান কে ফাইনাল থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়নি বরং ম্যাচের গোল দুটিও করেছে।"

কেএনভিবি কাপের ফাইনালেও ক্রুইফ গোল করে এবং আয়াক্স ৩-২ ব্যবধানে কাপ জয় করে।লিগে ক্রুইফ ২৫ গোল করে টপ স্কোরার হিসেবে মৌসুম শেষ করে এবং আয়াক্স লিগ জয় করে। এটা ছিল ক্রুইফের প্রথম "ট্রেবল"।

আয়াক্স আর্জেন্টাইন ক্লাব ইন্ডিপেন্ডিয়েন্টকে হারিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয় করে,যা বর্তমানে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ নামে পরিচিত।

১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে র‍্যাঙ্গার্সকে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ গোলে পরাজিত করে ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জয় করে।

২৭ আগস্ট ১৯৭৩, ক্রুইফ আয়াক্সের হয়ে চার গোল করে যে ম্যাচটি ঈগলসের বিপক্ষে ছিল এবং আয়াক্স ৬-০ গোলে জয় লাভ করে।

১৯৭২-৭৩ মৌসুমে আয়াক্স আবারও লিগ জয় করে এবং টানা ৩য় বারের মত ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন হয়,ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে য়্যুভেন্তাসকে ১-০ গোলে হারায়।১৯৭৩ সালে ক্রুইফ ২য় বারের মত ব্যালোন ডি'অর জয় করে।

আয়াক্স ছিল একটি ছোট দল।যায় কখনও ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের স্বপ্নও দেখত না, ক্রুইফের কল্যানে সেই দল টানা তিন বার ইউরোপিয়ান কাপ জয় করে,ফলে দলের সব প্লেয়ার সহ বোর্ড কর্মীরা ইউরোপে সুপারস্টার বনে যায়,দলে বিশৃঙ্খলার দেখা দেয়। ক্রুইফ অনেক চেষ্টা কেও যখন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনা, তখন আয়াক্স ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭৩ সালের মাঝামঝি সময়ে ক্রুইফ বিশ্বরেকর্ড $২ মিলিয়ন আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে এফ.সি বার্সেলোনার সাথে চুক্তি করে।

১৯৭৩ সালের ১৯ আগস্ট ক্রুইফ আয়াক্সের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলে, ম্যাচটি ছিল ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের ২য় ম্যাচ যা ছিল এফসি আমস্টারডামের বিপক্ষে এবং আয়াক্স ৬-১ জয় লাভ করে।

সমাপ্তি ঘটে ৯ বছরের লেজেন্ডারি ক্যারিয়ারের। আয়াক্সের হয়ে ঐ ৯ বছরে ৩১৮ ম্যাচে ২৫০ গোল করেন ক্রুইফ।জয় করেন ৬ টি লিগ শিরোপা, ৩ টি ইউরোপিয়ান কাপ সহ ১৬ টি ট্রফি।

২.

২৩ আগস্ট ১৯৭৩, ক্রুইফ তাঁর স্ত্রী ও পুত্র সহ কাতালুনিয়াতে পৌছায়। কাতালুনিয়ার সবাই তাঁকে হিরোর মত বরন করে নেই।ক্রুইফ তাঁর ছেলের জন্য কাতালান "জোরর্দি" নাম পছন্দ করেন,এতে ক্রুইফ সাধারন কাতালন দের কাছে আরও মহান হয়ে যায়। ঐ সময় বার্সেলোনার অবস্থা বেশি একটা ভাল ছিল না, তারা প্রায় ১৪ বছর লা লিগা জিততে পারেনি।

vruyff-monografic.v1458837898১৯৭৩ এর ডিসেম্বরে এতলেটিক মাদ্রিদের বিপক্ষে ক্রুইফ তাঁর অন্যতম আলোচিত এবং বিখ্যাত " দি ফ্যান্টম গোল " নামে পরিচিত গোলটি করেন।যখন ডি বক্সের ডান সাইড থেকে ক্রস আসে, ঐ সময়ই বল মাদ্রিদ গোলকি মিগুয়েল রেইনার বুক সমান উচ্চতায় ছিল। ক্রুইফ লাফিয়ে উঠে ডান পা দিয়ে কিক কেন এবং বল রেইনার পাশ দিয়ে জালে জড়ায়।

গোলটি সম্পর্কে পরবর্তীতে ক্রুইফ নিজে বলে ছিলেন : "আমি যখন ক্রসটা রিসিভ করেছিলাম তখন কি করব তা নিয়ে আমার মাথাই কোনো কিছুই ছিল না।মনে হল হেড দি কিন্তু ওটা তেমন স্পেশাল না,তাই ভেবে আমি ঘুরে লাফিয়ে কিক নেই।আমি আসলেই ভাগ্যবান ছিলাম যে বলটা জালে জড়ায়।"

পরবর্তীতে গোলটার নাম দেওয়া হয় "Le but impossible de Cruyff" যার অর্থ হল "ক্রুইফের অসম্ভব গোল" এবং ক্রুইফকে "the Flying Dutchman" নিকনেম দেওয়া হয় যার অর্থ হল "উড়ন্ত ওলন্দাজ"।

১৯৭৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী বার্সেলোনা সবচেয়ে বড় রাইবেল রিয়াল মাদ্রিদ কে তাদের হোম স্টেডিয়াম স্যান্তিয়াগ বার্নাবুতে ৫-০ গোলে বিদ্ধস্ত করে। এই জয় টা শুধু ক্রুইফের জন্যই সম্ভব ছিল।

ম্যাচের ৩০তম মিনিটেই অ্যাসেন্সা কাতালান দের লিড এনে দেন, ৩৯তম মিনিটে ক্রুইফ ব্যবধান ডাবল করেন,৫৪তম মিনিটে অ্যাসেন্সা আবার ও জালে বল জড়ান, ৬৫তম মিনিটে জুয়ান কার্লোস গোলের দেখা পায় এবং ৪ মিনিট পর সোডো জালে বল জড়িয়ে মাদ্রিদের কফিনে শেষ পেরেকটা পুতে দেন।

ম্যাচ দেখে হাজার হাজার কাতালান রাস্তায় নেমে পড়ে। কাতালুনিয়ার রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ মিছিল হয়।

ম্যাচের পর বিখ্যাত নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন জার্নালিস্ট লেখেন " ক্রুইফ কাতানালের জন্য ৯০ মিনিটে যা করেছে তা রাজনৈতিকরা বছরের পর বছর ধরেও করতে পারে নি।"

14fafb26-c7f3-4da5-bd2a-21ab169801da১৯৭৪ সালে ক্রুইফ তৃতীয় বারের মত ইউরোপিয়ান প্লেয়ার অফ দা ইয়ার নির্বাচিত হয়।ক্রুইফ ১৯৭৩-৭৪ লিগে ২৬ ম্যাচে ১৬ গোল করে এবং বার্সেলোনা ১৪ বছর পর লা লিগা জয় করে,এই মৌসুম ছিল মাদ্রিদেরর ইতিহাসের অন্যতম বাজে মৌসুম তারা লিগে ৮ম হয়। কাতালানরা ক্রুইফের ডাকনাম রাখেন " El Salvador" যার অর্থ হল "ত্রাণকর্তা"।

১৯৭৪ সাল বিশ্বকাপের বছর ছিল,স্বাভাবিক ভাবের সবার চোখ ব্যালোন ডি'অর জয়ী ক্রুইফের দিকেই ছিল।

মাত্র একটি বিশ্বকাপ খেললেও, বিশ্বকাপের অলটাইম সেরা একাদশে থাকেন ক্রুইফ।ক্রুইফের নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ড প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে। বিষয়টি অতটা সহজ না । একটু পিছনে ফিরলে দেখা যাবে, এর আগের ৯ টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ড শুধুমাত্র ১৯৩৪ আর ১৯৩৮ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়, ১৯৩৪ সালে বিশ্বকাপে ১৬ দলের মাঝে ৯ম, ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপে ১৫ দলের মাঝে ১৪তম হয়ে তারা আসর শেষ করে। এর পরের দুটি বিশ্বকাপে ইচ্ছা করে না খেলেও, তারপরের চারটি বিশ্বকাপে তো খেলার সুযোগই হয়নি তাদের।

গ্রুপে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গী ছিল সুইডেন, উরুগুয়ে এবং বুলগেরিয়ার । প্রথম ম্যাচ ছিল উরুগুয়ের বিপক্ষে, ডাচরা সহজেই এ ম্যাচে ২-০ গোলের জয় পায় । নেদারল্যান্ডের পরের ম্যাচটি ছিল সুইডেনের সাথে। গোল শূন্য ড্র হওয়া ম্যাচটি এখনো অমর হয়ে আছে ম্যাচটি ক্রুইফের কারণে। এ ম্যাচটি ফুটবল প্রমিকদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ক্রুইফের অতিমানবি ক্লাসিক টার্নের কারণে। ম্যাচের ২৩ মিনিটের খেলা চলছে, ডি বক্সের বাইরে থেকে ক্রুইফের ম্যাজিক অব্যহত রয়েছে। ২৩ থেকে ২৯ মিনিট এরমধ্যে ইতিহাসের সেরা ক্লাসিক্যাল টার্ন দেখালেন ক্রুইফ। সুইডিস ডিফেন্ডার জ্যান ওলস্যান ডি বক্সের বাইরে থেকে ক্রগইফের কাছ থেকে বল কাড়তে আসে,ক্রুইফ তখন বল কন্ট্রোলে নিয়ে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে জ্যানকে পরাস্ত করে। যা নামে ক্রুইফ টার্ন।শেষ ম্যাচ, লক্ষ জয়। ডাচরা বুলগেরিয়াকে সহজেই ৪-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হয়েই পরের রাউন্ডে।

২য় রাউন্ডে নেদারল্যান্ডের গ্রুপে ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং পশ্চিম জার্মানী।গ্রুপ টা ডেথ গ্রুফ ছিল।

প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনাকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করল ডাচরা। এ ম্যাচেই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল করেন ক্রুইফ। ১৩ তম মিনিটের মাথায় ২ পায়ের জাদুতে কয়েকজন প্লেয়ারকে বোকা বানিয়ে এমনকি গোলকিপারকেও কাটিয়ে গোল দেন ক্রুইফ। ডাচরা ১-০ তে এগিয়ে যায়।পুরো ম্যাচে ২ টি গোল আর ১ টি এসিস্ট করে দলকে ৪-০ গোলের জয় এনে দেন ক্রুইফ।

পরের ম্যাচে পশ্চিম জার্মানিকে ২-০ গোলে হারায় ডাচরা। ফলাফল দাড়ালো পরের ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট দরকার, ব্রাজিলের সাথে ড্র করলেই স্বপ্নের ফাইনালে যাবে ডাচরা।
এ ম্যাচেও ক্রুইফ জাদু, মাত্র ৫০ মিনিটের অ্যাসিস্ট করেন ক্রুইফ, তখন লিড ১-০, ৪ মিনিট পরে নিজেই পাওয়ার শর্টে গোল করেন, নেদারল্যান্ড জেতে ২-০ তে।

ফাইনালে পৌছায় ডাচরা।স্বপ্নের ফাইনাল স্বপ্নের মতই শুরু হয়, কিক অফ হতেই বল পেলেন ক্রুইফ, টোটাল ফুটবলের জনক তখন ছুটছেন বল নিয়ে, ডি বক্সে ঢুকে গেছেন, শট নিবেন এমন সময় তাকে মারাত্মক ফাউল করে বসে ৫৭ সেকেন্ড তখন ম্যাচের বয়স। ক্রুইফের কল্যাণে ডাচরা ১ম মিনিটেই পেল পেনাল্টি। ক্রুইফ নিসকেনকে পেনাল্টি নিতে দিলেন এবং গোল!!! ১-০ লিড।

ফুটবলের বরপুত্রকে বরণ করতে প্রস্তুত সবাই। কিন্তু বিধিবাম ভাগ্য সহায় ছিলো না, ব্যার্থ হাতাশ মনে ফিরিয়ে তাকে জীবিত রাখবেন বলেই বিধাতার ইচ্ছা ছিলো।
ম্যাচের তখন ২৫ মিনিট, পশ্চিম জার্মানি পেনাল্টি পেল এবং ১-১ সমতা। ম্যাচ চলছে আগুনে লড়াই, হটাৎ বেকেনবাওয়ার এর থ্রু পাস থেকে মিশেল বল পেয়েই গার্ড মুলারকে বল দেন! জার্মান দৈত্য বল পেয়েই ছুট দিল....... ডি বক্সের ভিতর থেকে গোলা শর্ট নিল এবং ২-১ ব্যাবধান, ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ল ডাচরা।

স্বপ্নের সালীল সমাধি হয়। ক্রুইফের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে। তবুও ঐ বিশ্বকাপে গার্ড মুলার এবং বেকেনবাওয়ারকে হারিয়ে তাঁরই হাতেই উঠেছিল বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেনবল।

এক নজরে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে ক্রুইফের পারফর্মেন্স (goal.com অনুসারে):
গোল : ৩টি
অ্যাসিস্ট : ৩ টি
গোলের সুযোগ তৈরি : ২৯ টি
সফল ড্রিবল : ৫৫ টি
গোল ডট কম রেটিং : ৯.৮২।

এদিকে বার্সেলোনায় হিরো ক্রুইফ ট্রেনিং স্কিপ করতে শুরু করে। ফলে নিজের গতি হারিয়ে ফেলে।১৯৭৫ সালে ক্রুইফ প্যারিস টুর্নামেন্টে পিএসজির হয়ে দুটি ম্যাচ খেলে কারণ ক্রুইফ পিএসজির প্রেসিডেন্ট ডিজাইনার ড্যানিয়েল হেক্টারের ফ্যান ছিল।

১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে ক্রুইফ আন্তর্জাতিক ফুটবলকে পারিবারিক কারনে বিদায় জানায়।সে কয়েকটি গনমাধ্যমকে বলে : আমার পরিবারের সদস্য দের কিটনাপ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ডাচ জাতীয় দলে ক্রুইফ ৫০ ম্যাচে ৩৩ গোল করেছে। সে যে ম্যাচে গোল করেছে ডাচরা ঐ ম্যাচ কখনও হারেনি।

১৯৭৮ সালে ক্রুইফের বার্সেলোনা লাস প্লামাসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কোপা ডেলরে জয় করে।

৩.

১৯৭৮ সালে ক্রুইফ প্রায় অবসর নিয়ে নিয়েছিল কিন্তু কয়েক জায়গায় তাঁর বিনিয়োগ করা টাকায় ব্যাপক লোকসান হয়। আমেরিকায় ৩২ বছর বয়সে ক্রুইফ এনএএসএলের দল লস এঞ্জেলেস অ্যাজটেকস যোগ দেন, অ্যাজটেকস হয়ে সে মাত্র এক মৌসুম খেলে এবং সে এনএএসএল প্লেয়ার অফ দা ইয়ার হয়।

পরের মৌসুমে সে ওয়াশিংটন ডিপ্লোম্যাটসে যোগ দেয়।১৯৮১ সালের মে মাসে গেস্ট প্লেয়ার হিসেবে মিলানের হয়ে একটা টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে ক্রুইফ ইঞ্জুরিতে পড়ে এবং ওয়াশিংটন ডিপ্লোম্যাটস ত্যাগ করে।

১৯৮১ তে তিনি আবারো স্পেনে ফিরে আসে লেভান্তের হয়ে, লেভান্তে তখন সেকেন্ড ডিভিশনে ছিল, ঐ মৌসুমে ১০ ম্যাচে ২ গোল করেন ক্রুইফ কিন্তু লেভান্তে ফাস্ট ডিভিশনে কোয়ালিফাই নিশ্চিত করে পারে না ফলে ক্রুইফ দল ত্যাগ করে।

১৯৮১ সালের ১লা ডিসেম্বর ক্রুইফ আয়াক্সের সাথে চুক্তি করে।আয়াক্সের সাথে ক্রুইফ ১৯৮১-৮২,৮২-৮৩ মৌসুমে ডাচ লিগ জয় করে এবং ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে ডাচ কাপ জয় করে।
তবে ১৯৮২-৮৩ মৌসুম শেষে আয়াক্স ঠিক করে ক্রুইফকে নতুন কন্টাক্ট অফার করবে না, এতে ক্রুইফ রাগান্বিত হয়ে আয়াক্সের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফেয়েনর্ডে যোগ দেয়।

ফেয়েনর্ডে সে ডাচ লিগ ও কাপ জয় করে।মাঠে অসাধারন পারফর্মেন্স করার কারনে ১৯৮৪ সালে ক্রুইফ ৫ম বারের মত ডাচ ফুটবলার অফ দা ইয়ার নির্বাচিত হয়।ক্রুইফ তাঁর শেষ ডাচ লিগ ম্যাচ খেলে ১৩ মে ১৯৮৪ সালে পিসি য্বল্লে এর বিপক্ষে। ক্রুইফ তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলে সৌদি আরবে আল- আহ্লির বিপক্ষে ঐ ম্যাচে সে গোল ও অ্যাসিস্ট করে।পুর ক্লাব ক্যারিয়ারে সে ৬৬১ অফিসিয়াল ম্যাচে ৩৬৯ গোল করে।

ক্রুইফের সম্মানে আয়াক্স তাদের " ১৪ নম্বর" জার্সিটি চিরদিনের জন্য তুলে রাখে।ক্রুইফের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল আয়াক্স তাদের স্টেডিয়ামেরর নাম "আমস্টারডাম এরিনা" থেকে পরিবর্তন করে " ইয়োহান ক্রুইফ এরিনা" রাখে।

ক্রুইফ একজন হেবি স্মোকার ছিলেন। সে প্রতিদিন প্রায় ২০ টারও বেশি সিগারেট খেতেন।

ক্রুইফ একবার বলেছিলেন :" আনার জীবনে শুধু দুইটা জিনিসের নেশা আছে একটা হল ফুটবল খেলা অপরটা সিগারেট। "

১৯৯১ সালে হার্টে সমস্যা হলে সার্জারি করার পর সে সিগারেট ত্যাগ করেন।২০১৫ সালে অক্টোবরে ক্রুইফের লাঞ্চে ক্যানসার ধরা পড়ে।২৪ মার্চ ২০১৬ সালে ৬৮ বছর বয়সে ক্রুইফ বার্সেলোনার একটি হাসপাতালে মৃত্যু বরন করে।ফুটবল হারায় তার একজন পিওর লিজেন্ড কে।

তাঁর সম্মানে ২ এপ্রিলে এল ক্লাসিকোতে ৯০০০০ বার্সেলোনা ফ্যান্স রা ন্যূ ক্যাম্পে বিরাট ফ্লাগ নিয়ে আসে যাতে " Gràcies Johan" লেখা ছিল যার অর্থ " তোমাকে ধন্যবাদ,ইয়োহান।"

ইয়োহান ক্রুইফ সিল্ড : নেদারল্যান্ডসের একটা ফুটবল ট্রফি, একে ডাচ সুপার কাপ ও বলা হয়।

ইয়োহান ক্রুইফ অ্যাওয়ার্ড : এটা আগে ডাচ ট্যালেন্ট অফ দা ইয়ার নামে পরিচিত ছিল। এই অ্যাওয়ার্ডটি আন্ডার-২১ ফুটবলার দের ১৯৮৪ সাল থেকে দেওয়া হয়।২০০৩ সালে এর নাম পরিবর্তনন করে ইয়োহান ক্রুইফ অ্যাওয়ার্ড রাখা হয়।

৪.

★ক্রুইফের অর্জন সমূহ ★

Johan-Cruyff★*ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ: ১(১৯৭২)

*ইউরোপিয়ান কাপ: ৩(১৯৭০-৭১,৭১-৭২,৭২-৭৩)

*ইউরোপিয়ান সুপার কাপ: ২(১৯৭২,৭৩)

*ডাচ লিগ(এরেডিভিজি): ৯( ১৯৬৫-৬৬,৬৬-৬৭,৬৭-৬৮,৬৯-৭০,৭১-৭২,৭২-৭৩,৮১-৮২,৮২-৮৩,৮৩-৮৪)

*ডাচ কাপ(কেএনভিবি কাপ): ৬( ১৯৬৬-৬৭,৬৯-৭০,৭০-৭১,৭১-৭২,৮২-৮৩,৮৩-৮৪)

*স্পানিশ লিগ(লা লিগা): ১(১৯৭৩-৭৪)

*স্পানিশ কাপ(কোপা ডেল রে): ১(১৯৭৭-৭৮)

1024px-Johan_Cruijff_bij_de_uitreiking_van_de_Ballon_d★*ব্যালোন ডি'অর: ৩(১৯৭১,৭৩,৭৪)

*ডাচ ফুটবলার অফ দা ইয়ার: ৫(১৯৬৭,৬৮,৬৯,৭১,৮৪)

*ডাচ স্পোর্টসম্যান অফ দা ইয়ার: ২(১৯৭৩,৭৪)

*ফিফা বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল: ১(১৯৭৪)

*এরেডিভিজি টপ স্কোরার: ২(১৯৬৬-৬৭,৭১-৭২)

*এইওসি ইউরোপিয়ান ফুটবলার অফ দা সিজন: ২(১৯৭০-৭১,৭২-৭৩)

*ডন ব্যালোন অ্যাওয়ার্ড: ২(১৯৭৭,৭৮)

*এনএএসএল এমভিপি: ১(১৯৭৯)

*ফিফা বিশ্বকাপ অল-স্টার টিম: ১(১৯৭৪)

*ফিফা বিশ্বকাপ অল টাইম টিম :১৯৯৪

*ফিফা বিশ্বকাপ ড্রিম টিম: ২০০২

*ফিফা ১০০

*আইএফএফএইচএস ইউরোপিয়ান প্লেয়ার অফ দা সেঞ্চুরি।

★ ক্রুইফের ১৪ নিয়ম ★

১. টিম প্লেয়ার : কাজ সম্পূর্ণ করতে হলে, আপনাকে সব সময় দলগত ভাবে কাজ করতে হবে।

২. দায়িত্ব : এমন ভাবে সব জিনিসেরর খেয়াল রাখতে হবে যে তা আপনার।

৩. সম্মান : একে অন্যকে সম্মান কর।

৪. ইন্টিগ্রেশন : তোমার কাজে অন্যদের কেও জড়িত কর।

৫.উদ্যোগ : নতুন কিছু করার সাহস রাখ।

৬. কোচিং : সব সময় দল একে আপরে সাহায্য করবে।

৭. পার্সোনালিটি : নিজের ব্যক্তিত্বতা বজায় রেখ ।

৮. সামাজিক সম্পৃক্ততা : মিথষ্ক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, খেলধুলা ও জীবন উভয় জায়গায়।

৯. টেকটিক : মুলসূত্র গুলো জানতে হবে।

১০. কার্যপদ্ধতি : কি করতে হবে ভাল কে জানা দরকার।

১১. উন্নয়ন : স্পোর্ট দেহ ও মনকে শক্তিশালী করে।

১২. শেখা : প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা কর।

১৩. এক হয়ে খেল : খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

১৪. সৃজনশীলতা : খেলার সৌন্দর্যকে নিংড়িয়ে আন।

৫.

♦ক্রুইফের কিছু বিখ্যাত উক্তি♦

১. আমার দলে গোলকিপার হল প্রথম অ্যাটাকার এবং স্টাইকার হল প্রথম ডিফেন্ডার।

২. ধনী ক্লাব গুলোকে কেন হারাতে পারবে না?আমি কখনও টাকার বস্তাকে গোল করতে দেখিনি।

৩. আমি সবসময় থ্র ইন করতাম কারন আমি রিটার্ন পাস পেতাম এবং ঐ মুহুর্তে আমিই এক মাত্র আনমার্ক প্লেয়ার।

৪. মাঠে একটা মাত্র বল আছে, কাজেই ঐ টাকেই পেতে হবে।

৫. একটা ম্যাচে প্রতিটি প্লেয়াররের পায়ে গড়ে ৩ মিনিট বল থাকে,কাজেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল: বাকি ৮৭ মিনিট কি করবে যখন পায়ে বল থাকবে না,এইটাই নির্ধারণ কে ভাল আর কে খারাপ প্লেয়ার।

৬. আমি একজন সাবেক প্লেয়ার,সাবেক টেকনিকাল ডিরেক্টর, সাবেক অবৈতনিক প্রেসিডেন্ট। এইটা একটা সুন্দর তালিকা যা প্রমাণ করে সবকিছুরই শেষ আছে।

৭. যখন পায়ে বল থাকবে মাঠটাকে যথা সম্ভব বড় কারে ব্যবহার করত এবং বল না থাকলে মাঠটাকে যথা সম্ভব ছোট করে ফেলবে।

৮. সব সময় প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বাজে প্লেয়ারকে বল রিসিভ করা নিশ্চিত করবে কারণ সাথে সাথেই বল ফেরত পারে যাবা।

৯. আমি ধার্মীক না। স্পেনে সব প্লেয়ারই মাঠে নামার আগে প্রার্থনা করে, যদি ঐটা কাজ করত তাহলে সব ম্যাচই "ড্র" হত।

১০. যারা আসল লিডার না তারা কেও মাঠে একটা ভুল করলেই খারাপ ব্যবহার করে।অপর দিকে আসল লিডার আগেই জানে প্লেয়ারা ভুল করবে এবং সে সেটা সমাধানের চেষ্টা করে।

১১. সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে হাজির হওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় আছে।যদি সঠিক সময়ে হাজির হতে না হতে পার তার অর্থ হল তুমি বেশি দ্রুত বা খুব দেরি করে ফেলেছ।(উক্তিটা পারর্ফেক্ট ট্যাকল করার বিষয়ে)

১২. হাজার বার বল নিয়ে জাগাল করতে পারা কোনো কৌশল না,প্রাকটিস করলে যেকেওই করতে পারবে।কৌশল হল একট টাচে সঠিক গতি,সময় এবং টিম মেটের সঠিক পায়ে বল পাস দেওয়া।

১৩. কোনো কিছু জেতার পর আর ১০০% থাকা যায় না,৯০% হয়ে যায়। বিষয়টা অনেকটা কোমল পানীয়োর বতলের মত,প্রতিবার ক্যাপ খোলার সাথে সাথে গ্যাসের ঘনত্ব কমতে থাকে।

১৪. প্রথম রাউন্ড পার করাই আমার লক্ষ্য না।আমি ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা এবং জার্মানির সাথে এক গ্রুপে পড়লে প্রথম রাউন্ড শেষে দুইজন রাইভেল কমে যাবে,আমি এই ভাবেই চিন্তা করি।

১৫. রেজাল্ট ছাড়া কোয়ালিটি অর্থহীন।কোয়ালিটি ছাড়া রেজাল্ট বোরিং।

১৬. আমি একই ভুল দুইবার করি না।

১৭. ফুটবল খেলা সিম্পল, কিন্তু সিম্পল ফুটবল খেলা হল সবচেয়ে কঠিন কাজ।

১৮. প্রতিটি অসুবিধারই সুবিধা আছে।

১৯. রাস্তায় খেলা ফুটবলার রা কোচ দেরা দ্বারা প্লেয়ার দের থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

২০. ইতালিয়ানরা আমাদের হারাতে পারে না, কিন্তু আমরা অবশ্যই তাদের কাছে হারতে পারে।

২১. শর্ট করতে হবে, নয়ত গোল করতে পারবে না।

২২. ফুটবল হল ভুলের খেলা,যে সবচেয়ে কম ভুল করে সেই জয় লাভ করে।

২৩. সমাপতন যৌক্তিক।

২৪. জয় লাভ করতে সব সময় প্রতিপক্ষের চেয়ে একটি গোল বেশি করতে হয়।

২৫. যদি কাওকে দলে রাখতে জোর করতে হয়,সে দলের কোনো কাজেরই না।

২৬. আমি এক জাহাজে কখনই দুইজন ক্যাপ্টেন রাখতাম না। আমাদের অতিত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।(নেইমারের ট্রান্সফারেরর বিষয়ে)

২৭. যখন কম্পিউটারের তথ্যের উপর কোনো ট্যালেন্টকে রিজেক্ট করা হয় আমি খুবই দুঃখ পাই।আমার সময় কম্পিউটার দিয়ে ট্যালেন্ট খোজা হলে আমিই হয়ত রিজেক্ট হয়ে যেতাম।১৫ বছর বয়সে আমি বাম পা দিয়ে কিক করলে সর্বোচ্চ ১৫ মিটার আর ডান পা দিয়ে কোনোমতে ২০ মিটার দূরে বল যেত। আমার কোয়ালিটি ছিল কৌশন,ভিশন যা কম্পিউটার নির্ধারণ করতে পারে না।

২৮. অনেক সময় হাটা শেখার আগেই দৌড়াতে হয়।

২৯. খুব কম প্লেয়ার আছে যারা জানে আনমার্ক থাকলে কি করতে হয়। এজন্য মাঝে মাঝে প্লেয়ার দের বলতে হয়: প্লেয়ারটা খুব ভাল কিন্তু মার্ক করার প্রয়োজন নেই।

৩০. বল ছাড়া, জেতা অসম্ভর।

৩১. সব কোচই মুভমেন্ট নিয়ে অনেক কথা বলে।আমি বলব খুব বেশি দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই।ফুটবল এমন একটি খেলা যা মস্তিষ্ক দিয়ে খেলতে হয়।সব সময় সঠিক স্থানে সঠিক সময় থাকতে হয়,খুব দ্রুত বা খুব দেরিতে নয়।

৩২. ফুটবল বিশ্বের জন্য,মেসি একটি মূল্যবান সম্পদ কারন সে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাচ্চাদের আদর্শ ব্যক্তি.... মেসি ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যালোন ডি'অর জয়ী হয়ে।সে পাঁচ,ছয়,সাত বার জিতবে।সে অন্য কাতারের।

৩৩. আমি যদি তোমাকে বোঝাতে চাইতাম, তাহলে আরো ভাল করে ব্যখ্যা দিতাম।

৩৪.ব্রিটেনে প্রধান সমস্যা হল সেখানে প্রতিযোগিতা ও ম্যাচের সংখ্যা অনেক বেশি।ইউরোপিয়ান কম্পিটিশন বা নতুন চিন্তা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না কারণ ঘরোয়া ফুটবলের উপর অনেক জোর দেওয়া হয়।

৩৫. যদি দেরিতে বল পাও, তার অর্থ হল তুমি ভুল পজিশন নির্বাচন করেছে।

বের্গকাম্প কখনই দেরি করত না।

৩৬. যদি জিততে না পার,তাহলে পরাজয় এড়ান নিশ্চিত কর।

৩৭. আমি যে যুগ রিপ্রেজেন্ট করেছি যা প্রমাণ করে আকর্ষণীয় ফুটবল উপভোগ্য এবং সফল ছিল, এবং খেলতেও মজার ছিল।

৩৮. আমি নিজের ওয়ালেট চুরি করতে চাই না।

৩৯.যারা আমার লেভেলের না, তারা আমার ন্যায়পরায়ণতা কে প্রভাবিত করে পারি না।

৪০.দর্শকরা যদি ম্যাচ উপভোগ করে এববং হাসি মুখে বাড়ি ফেরে তাহলে এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।