• হকি

হকির নিয়মে সংশোধনীঃ জানুয়ারি ১ হতে কার্যকর

পোস্টটি ৭৬৩৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর রুলস কমিটি হকি খেলার নিয়ম সংশোধনের জন্য এফইএইচ এর নিকট প্রস্তাবনা পাঠায়। তারই ধারাবাহিকতায় এই বছর রুলস কমিটি আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনে কিছু প্রস্তাবনা পাঠায় এবং এফআইএইচ এর কার্যনির্বাহী বোর্ড সেগুলোর অনুমোদন দেয়।

গোলকিপারের সুবিধাসম্বলিত খেলোয়াড় নামানোর নিয়ম আর নেই

এতদিন নিয়ম অনুযায়ী গোলকিপারের বদলে একজন ফিল্ড খেলোয়াড় নামানো যেত যে কিনা গোলকিপারের মতই হাত, পা কিংবা শরীরের অন্য কোনো অংশ দিয়ে বল ঠেকানোর সুবিধা পেত। কিন্তু সেই সুবিধা এখন আর নেই। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী হয় ১১ জন পূর্ণাঙ্গ ফিল্ড খেলোয়াড় নিয়ে খেলতে হবে নয়তো ১০ জন ফিল্ড খেলোয়াড় এবং একজন গোলকিপার নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে হবে। 

হকির নিয়মে সংশোধনীঃ জানুয়ারি ১ হতে কার্যকর

গোলকিপার এর বদলে একজন ফিল্ড খেলোয়াড় নামালে অন্য রঙের জার্সি পড়তে হয় যা দ্বারা সেই খেলোয়াড় একজন গোলকিপারের সকল সুবিধা ভোগ করবে তা নির্দেশিত হত। যেহেতু জানুয়ারি ১ থেকে গোলকিপারের বদলে ফিল্ড খেলোয়াড় নামানোর নিয়ম বদলে যাচ্ছে সেহেতু গোলকিপারের বদলি খেলোয়াড়কে অন্য রঙের জার্সি পড়তে হবে না। 

এই নিয়মটি বদল করা হয়েছে সম্পূর্ণভাবে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে। গোলকিপারের বদলি হিসেবে একজন ফিল্ড খেলোয়াড় মাঠে খেলছে এমন অবস্থায় প্রতিপক্ষ দল পেনাল্টি কর্ণার পেলে দুর্ধর্ষ গতির ড্র্যাগ ফ্লিক ঠেকানো ওই হতভাগ্য খেলোয়াড়ের জন্য এক দুঃস্বপ্নই হবে বটে।

[আরও পড়ুনঃ হকি প্রো লীগ - আর মাত্র এক মাস!]

চার কোয়ার্টারে খেলা এখন বাধ্যতামূলক

পরীক্ষামূলকভাবেই এতদিন খেলা হত চার কোয়ার্টারে। হকি ইন্ডিয়া লীগ, ইউরো হকি লীগ সহ নানান দেশের হকি লীগে ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই চার কোয়ার্টারের হকি। কিন্তু খাতা-কলমে ৩৫ মিনিট করে দুই ভাগে খেলার নিয়মই এতদিন বিধিবৎ ছিল।

জানুয়ারির এক তারিখ থেকে সারা বিশ্বে হকি ১৫ মিনিট করে চার কোয়ার্টারে খেলা হবে।

নতুন সংশোধিত ধারা ৫.১ অনুযায়ী ― একটি হকি ম্যাচ ১৫ মিনিট করে চার কোয়ার্টারে খেলা হবে। কোয়ার্টার ১ ও ২ এবং কোয়ার্টার ৩ ও ৪ এর মাঝখানে ২ মিনিট  এবং কোয়ার্টার ২ ও ৩ এর মাঝখানে ৫ মিনিটের বিরত অনুষ্ঠিত হবে।

এই আইনের অধীনে আরও বলা হয়েছে ―

  • টুর্নামেন্টের নির্দিষ্ট নিয়মে বিরতি নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা না থাকলে দুই দলের সম্মতিতে উপরে উল্লেখিত বিরতির বাইরেও অন্যান্য বিরতি নেওয়া যেতে পারে।
  • আম্পায়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কিন্তু নেওয়ার আগেই যদি সময় শেষ হয়ে যায় তবে সময় শেষ হবার পরেও আম্পায়ার তার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
  • কোয়ার্টারের সময় শেষ হবার ঠিক আগ মুহুর্তে যদি আম্পায়ার রিভিউ নিতে চান তবে সময় শেষ হয়ে গেলেও সেই রিভিউ পরিচালনা করা হবে। রিভিউতে যদি কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের করার সুপারিশ করা হয় তবে তা কার্যকর করা হবে।

পেনাল্টি কর্ণারে এখন সুনির্দিষ্ট নিয়ম

পেনাল্টি কর্ণার সমাপ্ত হবার পুরো বিধানটি বিলুপ্ত করে নতুনভাবে আইনটি সাজানো হয়েছে। হকি রুল বুকের ১৩.৫ ধারায় সুনির্দিষ্ট ৭ ঘটনাকে পেনাল্টি কর্ণার সমাপ্ত হবার নির্দেশক হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

এ আইন অনুযায়ী একটি পেনাল্টি কর্ণার তখনই সমাপ্ত হবে যখন ―

  • একটি গোল স্কোর করা হবে।
  • রক্ষণকারী দল ফ্রি হিট লাভ করবে।
  • বল সার্কেল হতে ৫ মিটার অতিক্রম করে ফেলবে।
  • বল ব্যাক-লাইন অতিক্রম করলে এবং পুনরায় পেনাল্টি কর্ণার ঘোষণা করা না হলে
  • ডিফেন্ডার এমন কোন ফাউল করলে যে ফাউল পুনরায় পেনাল্টি কর্ণার দেওয়ার যোগ্য নয়
  • পেনাল্টি স্ট্রোক দেওয়া হলে
  • বুলি ঘোষণা করা হলে

এখন হতে শুধুমাত্র এই কয়টি ঘটনা ঘটার ফলেই একটি পেনাল্টি কর্ণার সমাপ্ত বলে গণ্য করা হবে।

সার্কেলের ৫ মিটারের মধ্যে ফ্রি হিট ঠেকানো

হকি রুল বুকের ১৩.২(f) ধারা অনুযায়ী সার্কেলের ৫ মিটারের মধ্যে আক্রমণকারী দল ফ্রি হিট পেলে রক্ষণকারী দলের কোনো খেলোয়াড় বল ৫ মিটার পথ অতিক্রম না করা পর্যন্ত কোনো ট্যাকেল করতে পারবে না।

হকির নিয়মে সংশোধনীঃ জানুয়ারি ১ হতে কার্যকর

আক্রমণকারী খেলোয়াড় ফ্রি হিট পাবার সাথে সাথে খেলা শুরু করে দিলেও রক্ষণকারী খেলোয়াড় তাকে ট্যাকেল বা বল ছুঁতে পারবে না।

এসব সবারই জানা আছে। যে নিয়মটি পরিবর্ধন করা হয়েছে সেটি হল ফ্রি হিট পাবার পর রক্ষণকারী খেলোয়াড়ের যদি সময় থাকে ৫ মিটার পেছানোর তাহলে রক্ষণকারী খেলোয়াড়কে ৫ মিটার অবশ্যই পেছাতে হবে।

এই নিয়মটি আগের নিয়ম থেকে অত বড় কোনো নিয়ম না তবুও রক্ষণকারী খেলোয়াড়ের পেছানো ব্যাপারটি সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে আরকি।

এছাড়াও হকির নিয়মে আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে যা আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে পুরোপুরি দেওয়া হয়নি।

ফেস মাস্ক পরিধানে শিথিলতা

আগে ফেস মাস্ক শুধু পেনাল্টি কর্ণারের সময়ই রক্ষণকারী খেলোয়াড়েরা পড়তে পারতেন। পেনাল্টি কর্ণার শেষ হয়ে যাবার সাথে সাথেই ফেস মাস্ক খুলে ফেলতে হত এবং আম্পায়াররা এ ব্যাপারে কঠোর ছিলেন। পেনাল্টি কর্ণার শেষ হবার সাথে সাথে আক্রমণকারী দল ফ্রি হিট লাভ করলে রক্ষণকারী খেলোয়াড়দের ফেস মাস্ক তাড়াতাড়ি খুলে ব্যাক-লাইনের বাইরে ফেলে ফ্রি হিট ঠেকানোর জন্য অতি দ্রুত পজিশন নিতে হত। যা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য এবং বিরক্তিকর একটি কাজ।

কিন্তু এখন নতুন সংশোধনী অনুসারে রক্ষণকারী খেলোয়াড়রা পেনাল্টি কর্ণারের পর তৎক্ষণাৎ আম্পায়ার ফ্রি হিট ঘোষণা করলে সেই ফ্রি হিট ঠেকানোর জন্য ফেস মাস্ক খোলা ছাড়াই পজিশন নিতে পারবেন। কিন্তু ফেস মাস্ক নিয়ে অবশ্যই সার্কেলের বাইরে যাওয়া যাবে না।

হকি আইনের ৪.২(e) অনুসারে রক্ষণকারী খেলোয়াড়দের এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এখানে আরও একটি আইন সংযোজন করা হয়েছে। ১২.৪(a) ধারা অনুযায়ী রক্ষণকারী দলের মাটিতে পড়ে থাকা কোনো ফেস মাস্ক বা অন্য কোনো সরঞ্জাম যদি একটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেয় তাহলে সাথে সাথে পেনাল্টি স্ট্রোক ঘোষণা করা হবে।

অন্যান্য সংশোধনী

  • "Offence" এর সংজ্ঞা বদল করা হয়েছে। আম্পায়ার তখনই কোনো দন্ড প্রদান করবেন যখন কোনো আইন বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে ভঙ্গ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ - বিপদজনক উচ্চতার বল তখনই ফাউল হিসেবে আম্পায়ার ঘোষণা করবেন যখন তা প্রতিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়ের জন্য বিপদজনক হবে। নিজ দলের খেলোয়াড়ের জন্য তা বিপদজনক হিসেবে গণ্য হবে না।
  • ধারা ৯.৬ অনুযায়ী খেলোয়াড়েরা ফোরহ্যান্ডের সাহায্যে হকি স্টিকের গোড়া দিয়ে বলে হিট করতে পারবেন না।
  • পুশ করার নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী পুশ করার সময় হকি স্টিক বলের সাথে লাগানো বা বলের কাছাকাছি থাকতে পারবে।
  • ফেস মাস্ক এক কালারের হতে হবে। তবে স্বচ্ছ ফেস মাস্ক পরিধান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
  • গোলকিপাররা শুধু তাদের প্রটেকশন গিয়ার দিয়েই নয়, শরীরের যেকোনো অংশ ব্যবহার করে বল দূরে ঠেলে দিতে পারবেন।
  • পূর্বে ১০.৪ ধারায় উল্লেখিত ছিল যে গোলকিপাররা সার্কেলের বাইরে একজন ফিল্ড প্লেয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই ধারা মুছে দিয়ে এখন বলা হয়েছে সার্কেলের বাইরে গোলকিপাররা শুধুমাত্র তাদের হকি স্টিক ব্যবহার করে বল খেলতে পারবে।
  • ২০০৯ সালে প্রবর্তিত 'রুলস অফ হকি' অনুযায়ী রক্ষণকারী দল নিজেদের সার্কেলের ভিতরে ফ্রি হিট পেলে সার্কেলের যেকোনো স্থান থেকে অথবা  ব্যাক-লাইন হতে ১৫ মিটার পর্যন্ত বল এগিয়ে এনে  যেকোনো স্থান হতে খেলা যাবে (^১)। এখানে ব্যাক-লাইন হতে ১৫ মিটার পর্যন্ত বল এগিয়ে আনার ব্যাপারে কিছু নিয়ম আছে। টীকা ১ দ্রষ্টব্য।

টীকা ^১ঃ রক্ষণকারী দল নিজ আক্রমণকারী দল যেখানে ফাউল করেছে সেই স্থান থেকে সোজা বরাবর ততটুকু আগানো যাবে যতটুকু ব্যাক-লাইন হতে ১৫ মিটার হয়। সেই ১৫ মিটার স্থান হতে দুই সাইডলাইনে সমান্তরাল রেখা টানলে সেই রেখার যেকোনো স্থানে বল রেখে খেলা যাবে।

নতুন সংশোধনীগুলো নিয়ে আপনার মতামত কি? কমেন্টে টাইপ করে জানান। আপনি কি চান ২০১৯ সালে আপনার বন্ধুরা ভুল নিয়মে হকি খেলুক? নিশ্চয়ই না। এক্ষুনি শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।