• ক্রিকেট

সাকিব : একটি উপাখ্যান কিংবা আরও বড় কিছু

পোস্টটি ৪০৭৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

একটা উপাখ্যান লিখলেন আপনি। একটা অধ্যায়ের নাম-সাকিব আল হাসান অথবা বইয়ের পুরোটাই তাকে নিয়ে। শুরু কী দিয়ে করবেন? শেষটা? এই গল্পের কতো সব মোড়, হাসি-কান্নায় জমে থাকা এক দারুণ রোমাঞ্চ।

আপনি হয়তো সাকিবকে জানতেন আবেগহীন ক্রিকেটার হিসেবে, মনে হতো অজি মন-মাসিকতার। আবার আপনি যখন দেখেন, সাকিব কাঁদছেন সতীর্থকে ঝাঁপটে ধরে অথবা চোখের কোণায় পানি জমেছে কয়েকশ শব্দের একটা স্ট্যাটম্যান্ট পড়তে গিয়ে; তখন আপনার মনে হয়, আরে এ তো বাঙালিয়ানা।

আসলে সাকিব তো এমনই। দুর্দান্ত ক্রিকেট মস্তিস্কের একজন। ব্যাটসম্যানকে আগেই পড়ে ফেলে ২২ গজে যিনি দাপট দেখাচ্ছেন এক যুগ। ব্যকরণের বাইরের সব শট খেলে বোলারদের নাস্তানাবুদও করছেন সমান সময়। তার ক্যারিয়ার, জীবন সব কিছুই তাই এগিয়েছে নিজের মতো করে।

বাংলাদেশের কেউ, একটা জায়গায় এক নম্বর। সাকিবের আগে যা দেখাতে পারেনি কেউ। এই কথা চিন্তা করুণ ভালোভাবে, শরীরটা নিশ্চয়ই শিউরে উঠবে। ওয়াহাব রিয়াজের চোখে চোখ রেখে, শাসিয়ে টাইগার গর্জন জানানো, এ কেমন অনুভূতি বলুন তো!

সেসব থাকুক, আগে দুঃখের অধ্যায়টা শেষ করে নেই বরং। মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে তখনো শ দুয়েক দর্শক ‘সাকিব’, ‘সাকিব’ করছেন। সংবাদ কর্মীদের বেশির ভাগের উপস্থিতিই তখনো ১ নম্বর গেটে, সাকিবের অপেক্ষায়।

অথচ সাকিব এলেন অন্য গেট দিয়ে, ভিড় এড়াতে। সবাই দৌড়ে এলো, সাকিবকে দেখতে। তাতে বিস্ময়ের চোখ তো আছেই, অবিশ্বাস্যেরও। বিসিবির সিকিউরিটির জন্য যে চেক, সেখান দিয়ে কতবার ঢুকেছেন সাকিব, তার কী ইয়ত্তা আছে!

সাকিব এলেন এদিনও। দুই হাজার ১৯ সালের, নভেম্বরের দুই তারিখ। কিন্তু সাকিবকে এদিন লাগলো বিধ্বস্ত, চেনা পথটা যেন বড্ড অচেনা হয়ে উঠলো তার, সাকিবের মুখটাও। চারপাশের সবার বিষণ্ণ মনের ছাপটাও স্পষ্ট। রাজপুত্র আর নামবেন না মাঠে, একটা বছর। ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়েও গোপন করায়, তিনবার। তা যেন বিশ্বাস হয় না কারো।

তবুও আপনাকে বিশ্বাস করতে হয়, সবাইকেও। আপনি হয়তো সাকিবের চোখ ছলছল করা ছবিটা দেখে মন খারাপ করেন, আবার একটু এগিয়ে সাংবাদিকের টিপ্পনীতে সাকিবের হাসিটা আপনাকে আশা দেখায়, সাকিবের ‘আগের চেয়ে ভালোভাবে’ ফেরার। আপনি কি তখন প্রশ্ন করেন, কেন? জবাব কী আসে, সাকিব তো এমনই? আসলেই তো।

অথচ আপনি সাকিবকে জানতেন অধিনায়ক হিসেবে। রিকশায় করে আসেন যিনি, কোট-টাই পরে। আপনার হয়তো সাকিবকে ৫৮ আর ৭৮ এর অধিনায়ক হিসেবে মনে আছে। আবার প্রথম বিদেশের মাটিতে, তাদের হোয়াইট ওয়াশ করার নেতা হিসেবেও। ঘটনাটা ২০০৯ সালের, ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

আপনি সাকিবকে জানেন, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে। এই ব্যাপারে আপনার তার ধারে কাছেও কাউকে মনে হয় না, বর্তমান তো না-ই, আগেরও। সাকিব বিশ্বকাপে যেভাবে খেলেন, আপনার সেসব মনে হয় অন্য রকম কিছু। আপনি হয়তো বিশেষণ খুঁজে পান না ডিকশেনারিটা খুঁজে।

আপনাকে সাকিব কতবার আনন্দে ভাসিয়েছেন? অজি বধের সেই ম্যাচটার কথা মনে পড়ে আপনার? ক্রিকেটের আদি দেশটাকে হারিয়ে দেয়া, একেবারে কুলীন ফরম্যাটটাতে, সাদা পোশাকে। মুশফিক অধিনায়ক থাকেন যেখানে, আদতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন একজন-আপনার উপাখ্যানের নায়ক, সাকিব আল হাসান।

Image result for shakib salute to ben stockes

দুই ইনিংস মিলিয়ে ফেরান দশ অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানকে। প্রথম ইনিংসে পাঁচটি, দ্বিতীয়টিতেও। ব্যাট হাতেও করেন ৮৪ রান। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়া! আপনার স্টোকসকে দেয়া সেই সাকিবীয় স্যালুটের কথা মনে পড়ে? অথবা অদ্ভুত ভঙ্গিতে সেই সাকিবীয় উদযাপন?

আচ্ছা, আপনার কি মনে হয় এদেশের ক্রিকেটের বেশির ভাগটাই সাকিবীয়? আপনার কি বিশ্বকাপে সাকিবের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের কথা মনে পড়ে? ৮৬ গড়ে ৬০৬ রান, ২টা শতক, পাঁচটা অর্ধশতক।

আপনি কি জানেন, একই বিশ্বকাপে ১০ উইকেট আর ৬০০ রান আছে কেবল একজন ক্রিকেটেরারেরই? হ্যাঁ, সেটা আপনার দেশের সাকিব আল হাসানেরই। এটা তো আপনার জানা থাকারই কথা, সাকিবই তিন ফরম্যাটেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়া প্রথম ক্রিকেটার, এখনো একমাত্রও।

সাকিব এমন অনেক কিছু করেন। রেকর্ড, পরিসংখ্যানে নিজেকে নিয়ে যান আকাশ ছোঁয়া দূরত্বে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন- 'সাকিব আল হাসানের দেশ' বলে।

সাকিব আমাদের তার মাহাত্ম্য জানান দেন বারবার। ব্যাট আর বলের লড়াইয়ে ছাড় নয় এতটুকুও, প্রতিবার শেখান। আবার সাকিব হারান এক হেলার ভুলে। সাকিব যে এমনই।

আপনার হয়তো বৃদ্ধ বয়সে খুব অবসাদগ্রস্থ লাগবে শরীরটা। আপনি তখনো ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিতেও বিরক্ত হবেন। তখন কি আপনার সাকিব উপাখ্যান খুঁজে দেখতে ইচ্ছে করবে?

ধরুণ, আপনার চোখটা ঝাঁপসা এমন-লেখা দেখা যায় না ঠিকঠাক। এক হাত দূরত্বে থাকা চশমাটা পরতে ইচ্ছে করে না। বলুন তো, তখন আপনি কি করবেন? ইন্টারনেট তো চালাতে পারার কথা, সাকিবের খেলার হাইলাইটস দেখতে ইচ্ছে করবে?

আপনার কি সব বিষণ্নতা দূরে ঠেলতে এখনো সাকিব আল হাসানকে প্রয়োজন পড়ে? রেকর্ডবুকটা দেখলে বুক ফুলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, ‌‌‌'আমি সাকিব আল হাসানের দেশের লোক'? তাহলে তো আপনিই ঠিক পথে।

বিশ্বাস করুন, সাকিব এমনই। ঘোর লাগানিয়া, মুগ্ধতা ছড়ানো, বিস্ময় জাগানিয়া, বারবার ভালোবাসতে বাধ্য করা একজন। একটা উপাখ্যান কিংবা আরও অনেক অনেক বড় কিছু।

আচ্ছা, তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাবেন না আপনি? বলুন, 'শুভ জন্মদিন সাকিব'।