• ক্রিকেট

দ্য টেস্ট : দম্ভে আঘাত, হার, লড়াই, জয়, ‘এ নিউ এরা অফ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট’

পোস্টটি ১৮৩৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

The Test: A New Era for Australia's Team, Amazon Prime review ...হার,লড়াই, হার,লড়াই, হার, লড়াই…. হার আবার লড়াই তারপর জয়। মাঝখানের ডটগুলো পূরণ হয় অনেক গল্প জমা করে, ‘দ্য টেস্ট’ এর জন্ম দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন লণ্ডভণ্ড করে দেয় সব। শতবর্ষের অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে নামিয়ে আনে সবচেয়ে দুঃসহ সময়।

সংবাদ সম্মেলনে এসে অঝোরে কাঁদেন ‘নতুন ব্র্যাডম্যান’ তকমা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা স্টিভ স্মিথ, তার আগ পর্যন্ত অধিনায়কও যে তিনিই। আলাদাভাবে সংবাদ মাধ্যমর সামনে হাজির হন তার ডেপুটি ডেভিড ওয়ার্নার। তাতে লাভ হয় না একটুও, চোখের জ্ল আটকাতে পারেন না, হাউমাউ করে আসা কান্না একটু দমিয়ে রাখেন, চোখের জলটা পারেন না।

এতটুকু পর্যন্ত হারের গল্পই, এরপরও কিছুটা। তাতে মুষড়ে না পড়ে বরং বাড়ে লড়াইয়ের তেষ্টা। ডেরন লেহম্যান স্থলাভিষিক্ত হন জাস্টিন লেঙ্গার, ‘লড়াই’, ‘লড়াই’, ‘লড়াই’ মন্ত্র জপে দেন। শুরুতে বিনিময়ে আসে হার। লেঙ্গার শিষ্যদের মনে করান ‘তুমি খেলছো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে, জিততে হবে তোমাকে’।

অনভিজ্ঞ টিম পেইনের কাঁধে উঠে নেতৃত্বের ভার। পুরো দলটাকে গুঁছিয়ে রাখারও। বিধ্বস্ত আর বিপযর্স্ত একটা সৈন্য দলের দায়িত্ব দেয়া হয় এমন এক সেনাপতিকে, যার আদতে তেমন কোনো যুদ্ধের ইতিহাসই নেই। তবে তিনি জানেন একটা মন্ত্র, জয়ের নেশায় লড়াই করার।

কখনো আরব আমিরাত, কখনো ভারত অথবা নিজেদের মাতৃভূমি, হার যেন সঙ্গী হয় সর্বত্র। তাতে নিজেদের ফাস্ট্রেশেনের গল্পগুলোর সাক্ষী হয় ড্রেসিংরুম। আপনি যা দেখেননি কখনো, আপনার জন্য আমাজন প্রাইম নিয়ে আসে তার সবই।

এগ্রেশন, টিম মিটিং অথবা আক্ষেপ, আপনার কল্পনায় কখনো কখনো ভেসে ওঠা ড্রেসিং রুমের সেই সব দৃশ্য দেখা যাবে একেবারে বাস্তবে। ‘দ্য টেস্ট : নিউ এরা অফ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট’ এর সৌজন্যে।

আপনি সাক্ষী হবেন ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রাচীন ক্রিকেট সংস্কৃতিটার। টিম মিটিং, কোচেস মিটিং অথবা সতীর্থদের খুঁনসুটি সবকিছুই দেখা যাবে, ‘দ্য্ টেস্ট’ এ। ক্রিকটটা আসলে অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে কী, তাও স্পষ্ট হবে অনেকটা।

একটা ব্যাগি গ্রিন ক্যাপের মূল্য, মাথায় চাপানোর ভার আপনাকে মুহূর্তে মুহূর্তে জানান দেবে অজিদের ক্রিকেটে আবেগ। ট্রাভিস হেডের কথাই ধরুন, স্বপ্নের সেই ব্যগি গ্রিন ক্যাপ মাথায় চাপালেন, প্রথম বলেই ডাক মেরে ফিরলেন সাজঘরে। এ যেন স্বপ্ন ভঙ্গের তীব্র বেদনা। হেড তো নিজেই বলছেন, তিনি ছিলেন অভিষেকেই পেয়ারের শঙ্কায়।

শেষে তা হয়নি, হেড ফিফটি করেছেন তার ঠিক পরের ইনিংসেই। এর আগে যেমন ক্রিকেটারদের নিয়ে কবরস্থানে চলে গেলেন ল্যাঙ্গার। আসলে তা সাধারণ কোনো কবরস্থান নয়, সেখানে নিয়ে ক্রিকেটারদের ‘তুমি অস্ট্রেলিয়ান’ মনে করানোই লক্ষ্য।

রঙিন পোশাকের অধিনায়কত্ব যখন পান অ্যারন ফিঞ্চ, ‍শুরু হয় তার অফ ফর্মের। একটার পর একটা বাজে ম্যাচ, একাদশ থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কা জাগে নেতার। ল্যাঙ্গার নিজেই জানান, যে বেডরুমটায় যাওয়ার অনুমতি নেই কারো, ফিঞ্চকে সেখানেই সামর্থ্য মনে করান কোচ। তার প্রতিদানও দেন দু হাত ভরে, ‘ফিঞ্চ পারবেন থেকে ফিঞ্চ পেরেছেন’ বানিয়ে।  

অ্যাশেজের বারুদে উত্তেজনার তো দেখেছেন অসংখ্যবার। তখন ড্রেসিং রুমের অবস্থা কেমন থাকে দেখার ইচ্ছে নেই? বাস, হোটেল কিংবা মাঠ সব জায়গায় যখন ভর্ৎসনা স্মিথকে ঘিরে, সত্যিকারের ইস্পাত কঠিন মনোবল দেখিয়ে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দেয়া এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আসা এই ব্যাটসম্যানের। ক্রিকেটের চেয়ে তো একটু বেশি কিছুই।

জোফরা আর্চারের বাউন্সারে নাকাল হওয়ার আগে, ঠিক তার আগের ম্যাচটায় ১৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট জয় এজবাস্টনে। তারপর কেমন আনন্দে মাতে ড্রেসিংরুম? সঙ্গে মনে রাখে অ্যাশেজ জয়ের প্রতিজ্ঞা। আর্চারের বাউন্সারটা যখন লাগে স্মিথের মাথায়, মাটিতে শুয়ে পড়েন তিনি। ড্রেসিংরুমে তখনকার বিমর্ষ মুখগুলো, বাউন্সার আর হাতে পাওয়া আঘাত ভুলে গিয়ে ফের মাঠে নেমে পড়া, অ্যাশেজের প্রতি পরতে পরতে মিশে থাকা উত্তেজনা দেখা যাবে সবই।

১৮ বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে যখন অ্যাশেজ জয়ের যখন প্রহর গুনছে অজিরা, ঠিক সেই সময়টায় বেন স্টোকসের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংস। সারা দুনিয়া জুড়ে যেটা নিয়ে প্রশংসা আর উচ্ছ্বাস। অথচ প্রতিটা রান অজিদের জন্য বাড়িয়েছে কেবল আক্ষেপ।

হ্যারিস অল্পের জন্য ক্যাচ মিস ‘ড্রপ দ্য অ্যাশেজ’ ভাবনা। অথবা নাথান লায়নের সেই ‘ফাম্বল’, রান আউটটা করতে না পারা। আর টিম পেইন! অযথা রিভিউ নেয়া, পরে তার মাশুল গুনা। এই যন্ত্রণায় যখন কাতর সবাই, নিজেদের ভুল মাথায় এনে করছেন নির্ঘুম রাত্রি যাপন।

ঠিক সেই সময়টায়, ওই টেস্টটার শেষ ১৫টা ওভার। যেখানকার প্রতিটা বলে পেইনদের জন্য মিশে আছে ‘পেইন’। ল্যাঙ্গার বাধ্য করেন সেসব দেখতে। লায়ান দেখতে চান না, তবুও দেখতে হয়। নিজের ভুল স্বীকার করেন পেইন।

এরপর? আনন্দ, উল্লাস ‘অ্যাশেজ ইজ নট ওভার ইয়েট’ অথবা ‘লড়াই’, ‘লড়াই’, ‘লড়াই’ মন্ত্র জপে অ্যাশেজ জয়। এ যেন আট পর্বের এক ঘোরলাগা যাত্রা। যেখানে দম্ভের আঘাতের দেখা মেলে, হার আর লড়াইয়ের পর জয়েরও।

অ্যামাজন প্রাইমের ‘দ্য টেস্ট : নিউ এরা অফ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট’-এ।