জাতীয় লিগের 'সেরা' পাঁচ
শেষ হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট লিগের এবারের আসর। ১ অক্টোবর শুরু হয়েছিল ৬ রাউন্ডের রাউন্ড-রবিন এই লিগ, যার শেষে শিরোপা জিতেছে রাজশাহী। প্যাভিলিয়ন ফিরে তাকিয়েছে জাতীয় লিগের দিকে...
শান্ত-মিজানুর বনাম মজিদ-রনি
গত মৌসুমে রাজশাহীর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মিজানুর রহমান প্রথম শ্রেণিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৪১ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন, আব্দুল মজিদ ও রনি তালুকদারের ২০১৪-১৫ মৌসুমের ৩১৪ রানের রেকর্ড ভেঙে। হারানো রেকর্ডটা চট্টগ্রামের বিপক্ষে ফতুল্লায় প্রথম রাউন্ডেই ফিরে পেলেন মজিদ ও রনি, দুজন মিলে করলেন ৩৫০। ওপেনিংয়ে এই জুটির তৃতীয় ৩০০-পেরুনো জুটি এটি। দুজনই শেষ পর্যন্ত আছেন সর্বোচ্চ রান-স্কোরারের সেরা দশের তালিকায়- রনি পাঁচে, মজিদ আটে। বিফলে যায়নি তাদের এতো রান, দ্বিতীয় স্তর থেকে উন্নতি হয়েছে এবার ঢাকার। মজিদ-রনির রেকর্ডটা আরেকটু হলে আবার নিজেদের করে নিতেন শান্ত-মিজানুর, দ্বিতীয় রাউন্ডে রংপুরের বিপক্ষে ৩১১ রান তুলেছেন দুজন। মিজানুর সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহকের তালিকায় ১১-তে, ৩৬৬ রান নিয়ে। শান্ত অবশ্য দুই ম্যাচ পরই ছুটেছেন জাতীয় দলের ডাকে। আর তাদের রাজশাহী শেষ পর্যন্ত জিতেছে ৬ষ্ঠ শিরোপা।
ডাবলের ট্রিপল, হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক
প্রথম রাউন্ডেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন দুইজন- আরিফুল হক ও রনি তালুকদার। এরপর লিটন দাস ভেঙেছেন নিজের নিজের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড। জাতীয় লিগে এবার ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে এ তিনটিই, গত মৌসুমে হয়েছিল একটি বেশি। তবে এবার ধুম পড়েছিল যেন হ্যাটট্রিকের। মাঝে ছয় মৌসুম হ্যাটট্রিক ছিল না জাতীয় লিগে, সে খরা কেটেছে রাজশাহীর পেসার দেলোয়ার হোসেনের হাত ধরে। পরের রাউন্ডে হয়েছে আরও দুই হ্যাটট্রিক, করেছেন দুই বাঁহাতি অর্থোডক্স মনির হোসেন ও এনামুল হক জুনিয়র। পরিসংখ্যানে গতবারের চেয়ে এবার উন্নতি হয়েছে বেশি বোলারদেরই। গতবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ১১ জন বোলার, মোট ১৩ বার। এবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ১৮ জন বোলার, মোট ২২ বার। ম্যাচে দশ উইকেট এবার পেয়েছেন তিনজন- সিলেটের খালেদ আহমেদ, রাজশাহীর সানজামুল ইসলাম ও চট্টগ্রামের নাঈম হাসান। গতবার নিয়েছিলেন দুইজন। এবার মোট সেঞ্চুরি হয়েছে ৩০টি, গতবার যা ছিল ৩৫টি। সবচেয়ে বেশি ৩টি করেছেন তুষার ইমরান। এক ম্যাচেই দুই সেঞ্চুরি করেছেন, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে গড়েছেন দুইবার জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ড। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণিতে এক বছরে সর্বোচ্চ সাতটি সেঞ্চুরির রেকর্ডও হয়েছে তার।
অনেক আসার পরও বাকি অনেক পথ
প্রথম ইনিংসে দুই দলের স্কোরই ছিল সমান। দ্বিতীয় ইনিংসে জয় থেকে ৬১ রান দূরে বরিশালের পড়ল ৮ম উইকেট। তবে ৯ম উইকেটে নুরুজ্জামান ও তানভীর ইসলামের ৫৫ রানের জুটি বরিশালকে এনে দিচ্ছিল ‘গ্রেট এসকেপ’। রংপুরকে ব্রেকথ্রু এনে দিলেন সনজিত সাহা, আর ১ রান যোগ করে ফিরলেন নুরুজ্জামান। বরিশাল মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়ে থামলো সৈকতের একটু দূরে। তবে তারও ১ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে, রংপুর থেকে প্রায় ২১৬ কিলোমিটার দূরে বরিশাল ও রংপুরকে রেকর্ড-বঞ্চিত করে ফেলেছে সিলেট ও ঢাকা। খালেদ আহমেদের বলে আরাফাত সানি যখন এলবিডব্লিউ হয়েছেন, ঢাকা তখন জয় থেকে ৩ রান দূরে! অবশ্য বরিশালের উলটো চিত্র ছিল ঢাকার, ১৫ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে তারা হেরেছে নাটকীয়ভাবে। বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণিতে এতো রানের হিসেবে এতো কম ব্যবধানে এর আগে হারেনি কেউ।
একদিকে শাদমান, অন্যদিকে নাইম, সঙ্গে তুষার
গত মৌসুমে এক ম্যাচে নাইম হাসান নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এরপর নাইম চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রায় অভিষেকই করে ফেলেছিলেন। বয়স ১৮ পূর্ণ হয়নি এখনও, এবার জাতীয় লিগে এই অফস্পিনার এবার কেড়েছেন সব আলো। ২৮ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে তিনি, এক ইনিংসে ১০৮ রানে ৮ উইকেটের সেরা বোলিং ফিগারও। শীর্ষ দশে নাইম ছাড়া বাকি সবাই প্রথম শ্রেণিতে অভিজ্ঞ নাম। ২০.৫৩ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়েছেন ঢাকা মেট্রোর ১৯ বছর বয়সী পেসার কাজী অনিক। ৯ উইকেট নেওয়া আফিফ হোসেন আবার এক ইনিংসেই নিয়েছেন ৭ উইকেট। এ মৌসুমে অভিষেক হয়েছে রাজশাহীর পেসার মোহর শেখের, ৪ ইনিংসে ১১ উইকেট তার ঝুলিতে।
ব্যাটিংয়ে শীর্ষে শাদমান ইসলাম, ঢাকা মেট্রোর বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের মৌসুমটা গেছে দুর্দান্ত। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে তিনটি ফিফটি, সাদমানের গড় ৬৪.৮০। তার পরই তুষার ইমরান, প্রথম শ্রেণিতে যিনি এখন রান-তালিকায় ওপরের দিকে সদা-উপস্থিত। সবচেয়ে বেশি তিনটি সেঞ্চুরি তুষারের, গড় ৫৩.৪০। সৌম্য সরকারও ছিলেন ধারাবাহিক, জাতীয় দলের ডাকে লিগে ম্যাচের মাঝপথেই চলেও এসেছিলেন। তবে ভ্রমণ-ঝক্কি ক্লান্ত করেনি তাকে, করেছেন বোলিং-ও।
শুধু অর্ধেক পয়েন্ট
বোর্ডে ৫৯ রান, নেই ৮ উইকেট। ঢাকা মেট্রো সেই অবস্থাতেই করলো ইনিংস ঘোষণা। নগর-প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা বিভাগের সঙ্গে মেট্রোর সেই সিদ্ধান্ত ছিল ‘ট্যাকটিক্যাল’। জাতীয় লিগের এবার পয়েন্ট-পদ্ধতিতে প্রতি ইনিংসে ১০০ ওভারের আগে ৫ম, ৭ম ও ৯ম উইকেট নিতে পারলে প্রতি দল পাবে প্রতিবার পাবে দশমিক পাঁচ পয়েন্ট করে। এবার পয়েন্ট পদ্ধতি আক্ষরিক অর্থেই ছিল এমন- প্রতিটি রানই গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রতিটি উইকেট নয়। প্রথম ১০০ ওভারে ২৫০-এর ওপর প্রতিটি রানেই দল বোনাস হিসেবে পেয়েছে ০.০১ পয়েন্ট, তবে বোলিংয়ে ৫ উইকেটের পর বিজোড় উইকেটে ছিল বোনাস।
সেবার বোনাস পয়েন্ট আটকাতে পারলেও পরাজয়টা আটকাতে পারেনি মেট্রো। শেষ রাউন্ডে এসে দুই দলই নিজ নিজ ম্যাচ করেছে ড্র, দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রমোশন পেয়ে গেছে ঢাকা বিভাগ। দুইয়ে থাকা মেট্রোর সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান- ৪.২২।