মাশরাফির ভুল যেন মুস্তাফিজে না হয়
আগামীকাল ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে শুরু হচ্ছে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। মুস্তাফিজকে খেলানো উচিত হবে কি না, প্রথম একাদশ কেমন হতে পারে, বাংলাদেশের সম্ভাবনা আসলে কতটুকু- এসব নিয়েই প্রাক ম্যাচ বিশ্লেষণ করেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
মুস্তাফিজকে কি খেলানো উচিত?
মুস্তাফিজকে আগামীকাল প্রথম ওয়ানডেতে খেলানো হবে কি না, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক। অনুশীলন ম্যাচে সে বল করেছে, তবে আমাদের মনে রাখতে হবে লম্বা একটা সময় সে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে খেলেনি। আমি এখানে শুধু একটাই কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্ষেত্রে যে ভুল বাংলাদেশ করেছিল, সেটা যেন এখানে আর না করে।
সেবার ওয়েলিংটন টেস্টে (২০০১ সালে, সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম নিউজিল্যান্ড সফর) মাশরাফিকে একরকম জোর করেই নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ মাশরাফির ক্যারিয়ারের সোনালী সময় হতে যাচ্ছিল সেবার। হ্যামিল্টনে খেলতে গিয়েই ও পিঠে চোট পেয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের ফিজিও জন গ্লস্টার ও কোচ ট্রেভর চ্যাপেল তখন মাশরাফির ওপর সিদ্ধান্তটা ছেড়ে দেয়নি। ওয়েলিংটনে বলতে গেলে একরকম চোট নিয়েই মাশরাফিকে নামতে হয়েছিল। এরপর তো ওই চোটের বোঝা সারাজীবনই ওকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে।
মুস্তাফিজও কিন্তু বলতে গেলে মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছে। এক বছরের মধ্যেই ও কাঁধে চোট পেয়েছে। এরপর তো গত বেশ কয়েক মাস ধরে সে আর মাঠে নামতে পারেনি। প্রস্তুতি ম্যাচে ও খেলেছে, তবে আগামীকাল প্রথম ওয়ানডেতে খেলবে কি না সেটা এখনো সংশয়ে।
এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, সিদ্ধান্তটা ওর ওপর ছেড়ে না দিয়ে এখানে নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসা উচিত। তার বয়স কম, স্বাভাবিকভাবেই সে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকতে পারে। পুরোপুরি ফিট না হয়েই ওকে নামিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। এখানে বোর্ডের একটা ভূমিকা নেওয়া উচিত, ও যেন শতভাগ সেরে ওঠার আগে মাঠে না নামতে পারে। আর সামনেই টেস্ট আছে, মুস্তাফিজকে আমরা ওখানেই দেখতে চাই। এখনই আবার চোট পেলে সেটা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমি আবারও বলব, মাশরাফির ভুল যেন বাংলাদেশ মুস্তাফিজের বেলায় না করে।
একাদশ কেমন হতে পারে?
বাংলাদেশের একাদশ নিয়ে অনেক রকম কথা হচ্ছে। দেশের মাটিতে সবসময় বাংলাদেশ সাকিবের পাশাপাশি বাড়তি একজন স্পিনার খেলিয়েছে। তবে আমার মনে হয়, ক্রাইস্টচার্চে মাশরাফিরা চার পেসার নিয়েই নামতে পারে। স্পেশালিস্ট স্পিনারের ভূমিকায় সাকিব তো আছেই। আর শুরুতে তামিম, ইমরুলের পর সৌম্য, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব নামবে। এরপর মোসাদ্দেকও আছে। সেক্ষেত্রে চারজন পেসার বাংলাদেশ খেলাতেই পারে।
সৌম্যর কি আরেকটি সুযোগ পাওনা?
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে সৌম্য তো কিছু রান পেয়েছে। তবে এটা মানতে হবে, গত এক বছর ধরে ও বেশ রানখরায় ছিল। এই সময় অনেক অ্যাভারেজ ব্যাটসম্যানরাও ওর চেয়ে বেশি রান করেছে। তারপরও ওকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ দল হয়তো ব্যাপারটা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবেই দেখেছে। এই সময়ে চাইলে দল আরেকজন ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দিতে পারত। কিন্তু থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ওই সম্ভাবনা দেখেছেন বলে সৌম্যের ওপর আস্থা রেখেছেন। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় ওয়ানডেতে ওকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত। আর বল ব্যাটে আসবে, এ ধরনের পিচে ওর রান করতেও সুবিধা হবে।
ক্রাইস্টচার্চের মাঠ কি বোলার-বান্ধব?
আসলে নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে ম্যাচে উইকেটে বেশ ধরে, ক্রাইস্টচার্চেও হয়তো তার ব্যতিক্রম হবে না। আর ওয়ানডেতে তো মানুষ মাঠে আসেই রান দেখতে। তাই উইকেট পেস বা স্পিন- যেটাতেই সহায়ক হোক, ব্যাটসম্যানদের জন্য অন্তত প্রতিকূল হবে না। বিশেষ করে তামিম, সৌম্য বা ইমরুলের মতো “অন দ্য রাইজ” ব্যাটসম্যান যারা, তাদের জন্য এই উইকেটে খেলা উপভোগ্য হওয়ার কথা। বরং সাকিবের মতো যারা একটু শরীর থেকে দূরে বলটা খেলে, তাদের একটু সমস্যা হলেও হতে পারে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা আসলে কতটুকু?
পরিসংখ্যান তো বলছে, নিউজিল্যান্ড অনেকটাই এগিয়ে। বাংলাদেশ এখানে সাত ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই হেরেছে। তবে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ডের সঙ্গে যেমন খেলেছে, তাতে পরিসংখ্যানই শেষ কথা নয়। টপ অর্ডার ব্যাটিং আমাদের বড় শক্তি। আর ওদের ক্ষেত্রে সেটি ফাস্ট বোলিং। নতুন বলে সাউদি-বোল্ট কী করতে পারে, সবাই জানে। লড়াইটা আসলে হবে ওখানেই। আমাদের শক্তির জায়গাটারই ওরা কঠিন পরীক্ষা নেবে। হ্যাঁ, আমরা অনুশীলন ম্যাচটা হেরেছি, কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি আলাদা। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব, প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনাই আছে। আমি তো বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছি।