• নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ
  • " />

     

    কয়েকদিন ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতে হবে

    কয়েকদিন ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতে হবে    

    আশা জাগিয়েও শেষ টেস্টেও চতুর্থ দিনে হেরে গেল বাংলাদেশ। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরে এমন ব্যর্থতার কারণ কী? টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসেই বা বারবার দল ব্যর্থ হচ্ছে কেন? সাদা পোশাকে কি পরিকল্পনার অভাব আছে? সেসবই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল 


    টেস্টের মেজাজ বুঝে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ

    বৃষ্টির পর উইকেটটা একটু ভেজা থাকে, হোম কন্ডিশনে সেটার ফায়দা ওরা নেওয়ার চেষ্টা করবেই। এটা হচ্ছে ক্রিকেটীয় দিক। তবে আমি বলব, বার বার দ্বিতীয় ইনিংসে এসে ব্যর্থ হওয়ার কারণটা বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ নিয়মিত খেলার অভাব। গত এক বছরে দল এতো বেশি টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে খেলেছে, টেস্টের মেজাজটা বুঝে উঠতেই তাদের অনেক বেশি সময় লেগে গেছে। দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য তাদের আলাদা একটা মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি দরকার, সেটাও তাদের নেই।

    আরেকটা ব্যাপার, দলের থিঙ্কট্যাঙ্কেরও এখানে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এই জায়গায় আমরা আসলে সেভাবে কাজ করতে পারিনি। একটা দল যখন টানা একটা জায়গায় ব্যর্থ হতে থাকে, তখন কর্তৃপক্ষের উচিত ওই সমস্যাটা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করা। কিন্তু কেউই দীর্ঘমেয়াদে এখানে কোনো কাজ করেনি।

     

    শর্ট বলে সমস্যা মানসিক

    এখানে ব্যাপারটা আমি মানসিকই মনে করি। এত এত অভিজ্ঞতার পর এভাবে ওদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়াটা কোনোভাবেই সামর্থ্যের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। এখানে ব্যাটিং কোচ বা হেড কোচের ব্যর্থতাও আছে। নিউজিল্যান্ড যে শর্ট বলে ঘায়েল করবে সেটা আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী পরিকল্পনার ছাপ দেখা যায়নি। এখানে আসলে শুধু কোচিং স্টাফকে দায়ী করা উচিত হবে না। এটা আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতির অদূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ।
     

    হাই পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন আছে

    এই ট্যুরে আমরা এমনকি কোনো অনুশীলন ম্যাচেও জিততে পারেনি। টেস্টে একটু লড়াই করলেও ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে সেভাবে জয়ের পরিষ্কার সুযোগও পাইনি। সেদিক দিয়ে বলতে হবে, আমরা একেবারেই ব্যর্থ হয়েছি। তবে তারপরও অনেক কিছু ভাববার আছে। একটা ব্যাপার, বাংলাদেশ প্রায় আড়াই বছর পর উপমহাদেশের বাইরে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এখানে অবশ্যই বোর্ডের কিছুটা দায় আছে। বাইরে আরও বেশি খেলার ব্যাপারে দর কষাকষি করা উচিত। আর সেটা সবসময় সম্ভব না হলেও বোর্ড দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। আমাদের হাই পারফরম্যান্স বা 'এ' টিমগুলোকে খেলিয়ে তৈরি করার তো সুযোগ আছে। হাই পারফরম্যান্স নিয়ে আমরা শুধু শুধুই গুচ্ছের টাকা খরচ করছি। দেশে কিছু নেট সেশন করিয়েই তাদের যথেষ্ট উন্নত করা হয়ে গেছে বলে মনে করছি। কিন্তু এসব না করে তাদের বাইরের মাটিতে আরও বেশি ম্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। ''এ'' দলও কখন খেলছে সেটা নিয়ে আমরা তেমন কিছু জানি না। জাতীয় দল না পারলেও তাদের তো সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে।

     

    দীর্ঘমেয়াদী অধিনায়ক ভাবা উচিত

    দ্বিতীয় টেস্টে তামিমকে একরকম বাধ্য হয়ে অধিনায়কত্ব করতে হয়েছে। ব্যাট হাতে অন্তত সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেনি। আর অধিনায়ক হিসেবেও খুব মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেনি ও। ভারতের সঙ্গে সিরিজে আবার মুশফিক আসবে। আর সীমিত ওভারে মাশরাফি আছে। তবে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের এখন থেকেই একজন দীর্ঘমেয়াদী অধিনায়ক গড়ে তোলার দিকে নজর দেওয়া উচিত। এমন একজনকে বেছে নেওয়া উচিত, জাতীয় দলকে যে অন্তত দশ বছর সার্ভিস দিয়ে যেতে পারবে।

     

    স্লিপে সমস্যাটা ঐতিহ্যগত

    স্লিপে সমস্যা নিয়ে আগেও বলেছি, এটা আসলে চর্চার অভাব। আমাদের এখানে স্লিপ ফিল্ডারদের অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত পিচ বা কন্ডিশন নেই। তবে সেটা মাথায় রেখেও এতগুলো ক্যাচ না ধরতে না পারার কিছুটা দায় ফিল্ডিং কোচকেও নিতে হবে। অন্তত অনুশীলন আরেকটু ভালোমতো হলে এত ক্যাচ নিশ্চয় হাত থেকে গলে যেত না।

     

    ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হবে

    আপাতত যেটা করতে হবে, দেশে ফেরার পর ক্রিকেটারদের তিন চার দিন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে রাখতে হবে। তাদের একেবারে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া উচিত। আর সেটার পর আমাদের অবশ্যই বড় মঞ্চে আরও ভালো কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। ভারতের সঙ্গে একমাত্র টেস্টের আর খুব দেরি নেই, এই সময়ের মধ্যে চাইলেও খুব বেশি কিছু বদলে ফেলা সম্ভব নয়। মানসিক জায়গাটা ঠিক থাকলে আর বড় মঞ্চে পারফরম্যান্সের ব্যাপারে নিজেদের মানসিকভাবে তৈরি করতে পারলে হয়তো ভালো কিছু হতেও পারে সামনের সিরিজে।