• নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ
  • " />

     

    প্রথম ঘন্টায় উইকেট হারানো চলবে না

    প্রথম ঘন্টায় উইকেট হারানো চলবে না    

    চতুর্থ দিনের পর বেসিন রিজার্ভে জয়ের পাল্লা কোন দিকে হেলে আছে? বাংলাদেশকে ড্র নিশ্চিত করতে হলে কী করা উচিত? শেষ দিনে উইকেটের আচরণ কেমন হতে পারে? প্যাভিলিয়নে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন  বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। 



    প্রথম ঘন্টায় উইকেট হারানো চলবে না
    আজকে খেলা শেষ হওয়ার এক ঘন্টা আগেও মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা প্রায় নিশ্চিত ড্র হতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ বিকেলের পর এখন আর সেরকম কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা ওই আধ ঘন্টাই খারাপ খেলেছি, তাতেই কিন্তু ম্যাচটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। টেস্ট ম্যাচে এরকম একটা বাজে সেশনই পুরো খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কাল সকালে যদি বাংলাদেশ দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলে তাহলে ম্যাচ বাঁচানো আরও বেশি কঠিন হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম এক ঘন্টা কোনো উইকেট না হারিয়ে পার করে দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার ওপর মাথায় রাখতে হবে ইমরুল চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছে, মুশফিকও আঙুলের চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। তবুও আমাদের ব্যাটসম্যানদের ওপর এখনো আমার আস্থা আছে। এই ম্যাচ ড্র করতে না পারার কোনো কারণই আমি দেখছি না। এখনো প্রায় ৯৮ ওভারের খেলা বাকি আছে। আমাদের লক্ষ্য হবে অন্তত ৪০-৪৫ ওভার ব্যাটিং করা। আমাদের জন্য খেলাটা এখন রানের নয়, সময়ের। লাঞ্চ পর্যন্ত একটা উইকেটের বেশি না হারালে ড্র করতে না পারার কারণ নেই।

     

    নিয়ন্ত্রণ এখন নিউজিল্যান্ডেরই হাতে

    আজকে উইকেট না হারালে হয়তো কাল চা বিরতির আগে ইনিংস ঘোষণার কথা ভাবতে পারতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা আর ওরকম নেই। যতক্ষণ সম্ভব খেলে ম্যাচটা নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যেতে হবে। এই উইকেটে এমনকি ৪০ ওভারে ২৫০ তাড়া করে ফেলাও ওদের পক্ষে খুবই সম্ভব। ওই ঝুঁকিটা কখনোই নেওয়া যাবে না। তবে উইকেট যদি হঠাৎ খুব টার্ন করা শুরু করে, আর আমরা একটা নিরাপদ অবস্থায় চলে যাই, তাহলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে এটা ঠিক, জয়ের সম্ভাবনা আমাদের চেয়ে ওদেরই বেশি। 

     

    স্পিনারদের ভূমিকা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ

    যত ভালোই পিচই হোক, পঞ্চম দিনে এসে বোলাররা সাধারণত একটু সাহায্য পায়। বিশেষ করে স্পিন বা রিভার্স সুইংয়েই সেটা একটু বেশি পাওয়া যায়। বেসিন রিজার্ভের উইকেটে এখনও ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হয়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই, তবে স্পিনাররা আজকে ভালোই করেছে। আমি বলব, কাল উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ৩৫ ভাগ থাকলে বোলারদের পক্ষে থাকতে পারে ৬৫ ভাগ। সেক্ষেত্রে আগের কথাটাই আবারও বলব, সকালটা ঠিকঠাক পার করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওরাও চাইবে, সকালেই দ্রুত আঘাত হানতে।

     

    সাকিবের ভূমিকাটা অন্যরকম হতে পারে

    আমি বলব, সাকিবকে কাল বড় একটা ভূমিকা রাখতে হতে পারে। মুমিনুলও ক্রিজে আছে, প্রথম ইনিংসেও ভালো করেছে। তবে প্রথম ইনিংসে সাকিব যেমন খেলেছে, কাল ওকে আরেকটু বেশি ধৈর্য নিয়ে খেলতে হতে পারে। ইমরুল বা মুশফিকের এই অবস্থায় ওদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু আশা করা অনুচিত হবে। সেক্ষেত্রে সাকিব, মুমিনুল ও সাব্বিরকে একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। একটা বড় জুটি হলেই ম্যাচটা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে যাওয়া উচিত। 


    রাব্বির কথা আলাদা করে বলা উচিত

    ফাস্ট বোলারদের মধ্যে আমি বিশেষ করে কামরুল ইসলাম রাব্বির কথা আলাদা করে বলব। ওর মধ্যে আগ্রাসন ছিল, উইকেট থেকে ফায়দাও নিয়েছে। শুভাশীষও ভালো করেছে। বরং তাসকিনের মধ্যে আমি একটু কম আগ্রাসন দেখেছি। আজ সে প্রচুর এলোমেলো বল করেছে, শেষ পর্যন্ত ওভারপ্রতি পাঁচ রান করে দিয়েছে। টেস্টে টিকে থাকতে হলে আরও নিয়ন্ত্রিত বল করা শিখতে হবে ওকে। 

     

    বোলারদের ব্যবহারে পরিকল্পনার অভাব ছিল

    সাকিবকে কালই দেরিতে আনা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ও বল করেছে মাত্র ২৭ ওভার। ওকে আরও বেশি বল করানো যেতে পারত। সেটার জন্য লম্বা ব্যাটিংজনিত ক্লান্তি বা অন্য কোনো কারণ ছিল কি না জানি না। তার ওপর, ওরা যখন জুটি গড়ে ফেলছিল, মাহমুদউল্লাহর মতো কাউকে আরও আগেই নিয়ে আসা যেত। এদিক দিয়ে বলব, আজকেও বোলারদের সামলানোর ব্যাপারটাতে একটু পরিকল্পনার অভাব ছিল। 

     

    ইমরুল আশাতীত ভালো করেছে

    ইমরুল আসলে যেটি করেছে, সেটা ওর কাছে আসলে আশার চেয়েও অনেক বেশি ছিল। টানা ১৫০ ওভারের সেই ধকলের পরে সে আবার ওপেনিংয়ে নেমে গেছে। সে যে মাসলে টান খেয়ে মাঠ ছেড়ে উঠে গেল, সেটার জন্যও এই ব্যাপারটা দায়ী হতে পারে। তবে এই পর্যায়ে ফিটনেসের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত চাপের ব্যাপারটা কমবেশি সবাইকে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। ইমরুলের ক্ষেত্রে হয়তো কিপিং করার মানসিক চাপটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। আর ও কিন্তু শেষ টি-টোয়েন্টিতেও ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঘাত পেয়েছিল। সেটাও আজকের ঘটনার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।