• নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ
  • " />

     

    টেস্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা উচিত ছিল

    টেস্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা উচিত ছিল    

    ওয়ানডের পর এবার টি-টোয়েন্টিতেও ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে কি টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া উচিত ছিল মাশ রাফির? প্রথম একাদশ বাছাইয়ে আবারও ভুল করেছে বাংলাদেশ? টি-টোয়েন্টির হতাশা কাটিয়ে টেস্টের জন্য প্রস্তুতিই বা নিতে হবে কীভাবে? সেসবই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল 


     

    টসে জিতে ভুল সিদ্ধান্ত

    পর পর বেশ কয়েকটা ম্যাচে টসে জিতেছে মাশরাফি। তবে আগের দিন মতো আবারও বলব, আজও ওর সিদ্ধান্তটা হয়তো ভুল ছিল। ছোট দৈর্ঘ্যের ম্যাচে টসে জিতলে অবশ্যই ব্যাটিং নেওয়া উচিত। এই উইকেটে আমরা শুরুতে ব্যাট করে ১৬০ রান করলেও সেটা ওদের জন্য তাড়া করা কঠিন হতো। শুরুতে নির্ভার ব্যাট করে ওরা যেমন ২০০র কাছাকাছি করে ফেলেছে, তখন এই কাজটা এতোটা সহজ নাও হতে পারত।

     

    কয়েকটা ওভারেই রঙ বদলে গেছে

    আগের দিনের মতো আজও কিন্তু আমরা ওদের চেপে ধরেছিলাম। ৪১ রানে ৩ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর আসলে স্কোরটা এত বেশি কোনোভাবেই হওয়ার কথা না। রুবেল আজ শুরু থেকেই ভালো বল করছিল, তাসকিনের মধ্যেও আগ্রাসন ছিল, মাশরাফিও প্রথম ওভারটা খুব খারাপ করেনি। কিন্তু দুইটি খারাপ ওভারই আসলে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে দিয়েছে। ছোটখাট কিছু ব্যাপার- যেমন সাকিব ও তামিমের দুইটি ক্যাচ মিস, কয়েকটা মিসফিল্ডিং- এসবের জন্যও আসলে অনেকটা মাশুল দিতে হয়েছে। আর আরেকটা কথা বলতেই হবে- ওদের রানিং বিটুইন দ্য উইকেট ছিল দুর্দান্ত। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের সবসময়ই চাপের ওপর রেখেছে। যে কাজটা আমাদের ব্যাটিংয়ের সময় আমরা করতে পারিনি।

     

    আবারও ভুল দল নির্বাচন

    আমি আগেই বলেছিলাম, টি-টোয়েন্টিতে আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে নামাটা ভুল। ওয়ানডেতেও আমরা একজন কম বোলার খেলিয়েছিলাম। মিরাজের মতো কাউকে অবশ্যই আমাদের টি-টোয়েন্টিতে খেলানো উচিত ছিল। সেক্ষেত্রে ওই সময় হয়তো হুট করে সৌম্যকে বল দিতে হয় না।

     

    বাতাসের প্রভাব

    আমি শুনেছি, আগের ম্যাচের পর মাশরাফি বলেছিল, বাতাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বোলারদের সমস্যা হয়েছে। আজও কিন্তু এক পাশ থেকে বেশ খানিকটা বাতাস ছিল। যেটা ব্যাটসম্যানদের কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। তবে আমি বলব, এই ব্যাপারটা খুব বড় করে দেখার কিছু নেই। বাতাসের সুবিধা দুই পক্ষেই ছিল, নিউজিল্যান্ড সেটাকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। এখানে বাংলাদেশের যে ব্যর্থতা আছে, আমার মনে হয় না হারের ওপর এটা খুব বেশি প্রভাব ফেলেছে।

     

    ফেরার আভাস দিচ্ছে সৌম্য

    পর পর দুই ম্যাচে ভালো শুরু করেছে সৌম্য। আজও বল ওর ব্যাটে ভালোমতো আসছিল, উইকেটেও সে বেশ স্বচ্ছন্দ ছিল। তবে আমার মতে, দুইটি টি-টোয়েন্টির সাফল্য নিয়ে এখনই ওরকম আত্মপ্রসাদে ভেসে যাওয়ার কিছু নেই। সামনে টেস্ট আছে, সেখানেই সৌম্যর আসল পরীক্ষা।

     

    মাঝের রানখরাটা অনিবার্য

    শুরুটা ভালো করার পরেও বাংলাদেশ মাঝের সময়ে সেভাবে রান তুলতে পারেনি। তবে ম্যাচের সব ওভারেই কিন্তু আপনি সমানতালে রান তুলতে পারবেন না। বাংলাদেশ শুরুতে বেশ দ্রুত রান তোলার পর গতিটা স্লথ হয়ে গিয়েছিল। এটা আসলে হবেই। সত্যি কথা হচ্ছে, প্রথম ৬ ওভারের পর আমরা অ্যাভারেজ ক্রিকেটই খেলেছি। বরং একটু থমকে যাওয়ার পর একজনের রানের চাকায় একটা জোর ধাক্কা দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা করতে করতে সাকিবরা একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছে।

     

    সব বিভাগেই ওরা এগিয়ে

    দুইটি টি-টোয়েন্টিতে একটা সময় গিয়ে মনে হয়েছে, আমাদের হয়তো একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে এই আশা জাগানিয়া সময়টা আসবেই। এটা নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত হওয়ারও কিছু নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা ব্যাটিং- বোলিং-ফিল্ডিং সবকিছুতেই ওদের কাছে একরকম বিধ্বস্ত হয়েছি। এই সত্যটা মেনে নিয়েই আমাদের সামনে তাকাতে হবে।

     

    আসল পরীক্ষা সামনেই

    বাংলাদেশের আসল পরীক্ষা অবশ্য অপেক্ষা করছে। তবে আমি একটা ব্যাপার জেনে বিস্মিত, বোর্ড টেস্টের আগে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ রাখেনি। ইংল্যান্ড যেখানে বাংলাদেশে এসে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলে গেছে, সেখানে বাইরের কন্ডিশনে অবশ্যই বোর্ডের এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। তবে এই মুহূর্তে টিম ম্যানেজমেন্টের মূল কাজ আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর সব ভুলে টেস্টের জন্য নতুন উদ্যমে শুরু করার কাজটা খুব একটা সহজ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, টেস্টই এখানে আসল পরীক্ষা। তবে সেই প্রশ্নপত্র ওয়ানডে টি-টোয়েন্টির চেয়েও অনেক বেশি দুর্বোধ্য হতে পারে। এই চারদিন নিবিড় অনুশীলন করে ওই আত্মবিশ্বাসটাই আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।