• ক্রিকেট

ক্রিকেট না তামাশা...?

পোস্টটি ৩৭০৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ঘটনা ১:  ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ঘরের মাঠে নিজেদের ইচ্ছেমত উইকেট চেয়েও পায়নি টিম বাংলাদেশ। টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছিল ব্যাটিংস্বর্গ আর গামিনি দিয়েছিলেন বোলিং স্বর্গ! এর জন্য বিসিবি গামিনিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কারণ তিনি দর্শাননি!

এখানে গামিনি বিসিবির চাকুরী করে নাকি বিসিবিই গামিনির চাকুরী করে ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য নয়! কারণ গামিনি বিসিবির চাকুরী করলে তো তিনি অবশ্যই বাংলাদেশ টিমের চাহিদা অনুযায়ী উইকেট তৈরি করতেন আর বিসিবির দেওয়া নোটিশের জবাব দিতেও বাধ্য থাকতেন। তাই নয় কি...?

কিন্তু গামিনি বোধহয় বিসিবির চাকুরী করেন না।তাই তিনি হয়তো নোটিশের তোয়াক্কাই করেননি!সে যাই হোক, এই ঘটনার জন্য আপনি কাকে দায়ী করবেন...? গামিনিকে...? যদি করে থাকেন তাহলে ভুল করছেন। এখানে গামিনির দোষ সামান্যই। কারণ গোড়াতেই যখন গণ্ডগোল তখন আর আগার দোষ দিয়ে লাভ কি বলুন...? বিসিবিই হয়তো এই ব্যাপারে গাছাড়া ভাব দেখিয়েছে।তাই গামিনিও পার পেয়ে গেছে।অবশ্য এসব  নিয়ে গাছাড়া ভাব দেখানোটা যে বিসিবির কাছে নতুন কিছু নয় সেটা এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মোটামুটি সবারই জানা!

ঘটনা ২: সাকিবের ইনজুরিতে প্রায় ৪ বছর পর জাতীয় দলের দরজা খোলে রাজ্জাকের জন্য। তাকে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে রাখেন নির্বাচকরা। কিন্তু সেই টেস্ট তাকে দর্শক বানিয়ে অভিষেক করানো হয় সানজামুলকে। নাটকের তো তখন কেবল শুরু। এরপর চট্টগ্রামেই রাজ্জাককে নিয়ে টানা হেচড়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে টিম ম্যানেজমেন্ট! ম্যাচ শুরু হতেই টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হয়, আরে রাজ্জাক যেহেতু খেলছে না তাহলে তাকে শুধু শুধু কেন তাকে বয়ে বেড়াবে!কি দরকার বাড়তি বোঝার!" যেই ভাবা সেই কাজ।ছেড়ে দেয়া হলো রাজ্জাককে।

দল থেকে গিয়ে রাজ্জাক যোগ দিয়েছিলেন চলমান ডিপিএলে তার দলের সঙ্গে।কিন্তু রাজ্জাক নাটকে নতুন মোড় যুক্ত করতে চট্টগ্রামে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই আবারো ডেকে পাঠানো হলো রাজ্জাককে! একটা প্লেয়ারকে নিয়ে এরকম টানা হেচড়া কস্মিনকালেও কেউ দেখেছে কিনা সন্দেহ আছে! চট্টগ্রাম টেস্টে যদি রাজ্জাককে না'ই খেলানো হবে তাহলে কেন তাকে ডাকা হয়েছিল...? এই প্রসঙ্গে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের ভাষ্য তাদের কাছে নাকি রাজ্জাকের চেয়ে সানজামুলকেই বেশি উপযুক্ত মনে হয়েছে!

তাহলে এক টেস্ট দেখেই রাজ্জাকের চেয়ে উপযুক্ত সানজামুলকে কেন ছেড়ে দেয়া হলো...? ঢাকা টেস্টে নির্বাচকরা তাকে স্কোয়াডেই রাখলেন না! এক টেস্টে দেখেই নির্বাচকরা তার সামর্থ্য বুঝে ফেললেন! দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করাটাকে আমাদের নির্বাচকরা রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।আর প্রতিটি সিরিজে তাদের এই শৈল্পিক গুণে মুগ্ধ করেই চলেছেন!

ঘটনা ৩ : প্রথম টেস্টে মোসাদ্দেকের পারফরমেন্স নির্বাচকদের মনজয় করতে পারেনি।তাই দ্বিতীয় টেস্টেই তাকে দল থেকে ছেটে ফললেন।তার বদলে দলে ফেরালেন প্রথম টেস্টে বাদ পড়া সাব্বির রহমানকে। টেস্টে যার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে হরহামেশাই! অবশ্য ঢাকা টেস্টের পারফরমেন্স দিয়ে সাব্বিরও বুঝিয়ে দিয়েছেন টেস্টে তার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ম ওঠাটা একদমই অযৌক্তিক কিছু নয়!

সাব্বিরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচকের বক্তব্যটা আপনাদের একটু শোনানো যাক - " সাব্বির যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেটে বহিষ্কৃত আছে তাই দল থেকে বাদ পড়লে সে খেলার মধ্যে থাকবে না। কিন্তু আমরা তাকে টি টুয়েন্টির জন্য বিবেচনা করছি। তাকে খেলার মধ্যে রাখার জন্যই স্কোয়াডে রাখা হয়েছে।" তাহলে মানেটা কি দাড়াল...? নির্বাচকরা টেস্টে  টি টুয়েন্টির জন্য প্লেয়ারকে টেস্ট করাচ্ছেন! যেখানে সারাবিশ্ব টি টুয়েন্টির চেয়ে টেস্টকে প্রাধান্য দেয় সেখানে আমাদের নির্বাচকরা টেস্টের চেয়ে টি টুয়েন্টিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন! এটাও সম্ভব...?হ্যা ভাই এটাও এখন আমাদের ক্রিকেটে সম্ভব। আমাদের নির্বাচকরা যে সব অসম্ভবকে সম্ভব করার পণ নিয়ে রেখেছেন!

ঘটনা ৪ : দ্বিতীয় টেস্টে লজ্জাজনক হারের ঠিক পরপরই টি টুয়েন্টি সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেন নির্বাচকরা। আর তাতে সাকিবের নাম দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলেন।কিন্তু আমাদের নির্বাচকদের দল ঘোষণা মানেই যে রোমাঞ্চকর এক গল্প! যার পরতে পরতে মিশে থাকে রহস্য আর অনিশ্চয়তা! আর সেই রহস্যকে ভিন্ন রূপ দিতে আমাদের নির্বাচকরা একেবারে সিদ্ধহস্ত!

এবার রহস্য উন্মোচনের পালা।সাকিব রহস্যের সমাধান সাংবাদিকদের নিজেই দিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি বলেন, " সাকিব প্রথম টি টুয়েন্টিতে খেলতে পারবে না।আর এটা আমি আগে থেকেই জানতাম।" খেলা শুধু আমাদের প্লেয়াররা না, মাঠের বাইরে থেকে নির্বাচকরাও দেখায়! সাকিব খেলতে পারবে না জেনে তাকে দলে রাখার মানে তো শুধু তিনি আর তার নির্বাচক প্যানেলই জানে।আমাদের কাজ শুধু বিভ্রান্ত হওয়া।আর আমরা তা নিজ দায়িত্বেই হচ্ছি! ক্রিকেটের মতো দল নির্বাচন করাটাও অনিশ্চয়তার চাদরে মুড়ে ফেলেছে আমাদের নির্বাচক প্যানেল। যার পর মুহূর্তে কি হবে তা জানা নেই কারোরই! 

তো এইসব কিছুকে কি আপনাদের তামাশা মনে হয়নি...? ক্রিকেটের নামে এখন আমাদের দেশে যা হচ্ছে তা আসলে বিশাল এক রঙ্গমঞ্চে রহস্য আর অনিশ্চয়তায় ঘেরা এক তামাশা।যার আর্টিস্ট হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে প্লেয়াররা, স্ক্রিপ্ট রাইটার নির্বাচকরা আর পরিচালক...? আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ( বিসিবি)!

এ ব্যাপারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডক খুব ভালো  উদাহরণ হতে পারে। ক্রিকেটের পরিচালনা পর্ষদের তামাশা, উদাসীনতা আর দুর্নীতির ফল ভোগ করছে এখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। এক সময়কার প্রতাপশালী দলটিই এখন খর্বাকার রূপ ধারণ করেছে। বিসিবির এই তামাশাও আমরা ক্রিকেটপ্রমীরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে আর সর্বোচ্চ প্রতিবাদটুকুই করতে পারব।এর বেশি করার মতো কিছু আমাদের হাতে নেই।এসব সমস্যার সমাধান বিসিবিকেই দক্ষ হাতে করতে হবে।

আর যদি এরকমভাবেই চলতে থাকে সবকিছু তাহলে কে জানে হয়তো অদূর ভবিষতে আমরাই হবো ক্রিকেটবিশ্বের দ্বিতীয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ!