• হকি

তেরাসাঃ হকি ট্যালেন্ট ফ্যাক্টরি

পোস্টটি ৬১৪১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

তেরাসা মনে হয় পৃথিবীতে যে জায়গাগুলোয় হকি খেলা হয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

স্পেনের বার্সেলোনার এই প্রদেশের মাত্র আড়াই লক্ষ জনসংখ্যায় প্রতি ২০০০ জনের মধ্যে একজন অলিম্পিক খেলোয়াড় আছে। এখানে মাত্র পাচঁটি হকি ক্লাব থাকলেও হকিকে বিশ্বমানের খেলোয়াড় উপহার দিয়ে যাচ্ছে এই প্রদেশ।

কিন্তু কিভাবে তারা বিশ্বমানের খেলোয়াড় তৈরি করছে?

এর রহস্য খুঁজতে হলে চলে যেতে হবে তেরাসার একদম ক্ষুদ্র জনপদে।

তেরাসা প্রদেশের শহরগুলো তেমন বড় নয়। সেখানকার বাচ্চারা গুটিকয়েক স্কুলেই পড়ালেখা করে। আমাদের দেশের মত অলিতে-গলিতে স্কুল নেই তাদের। হাতে-গোনা কয়েক কিন্তু মানসম্পন্ন স্কুলেই সেখানে প্রায় সব বাচ্চারা পড়ালেখা করে।

20150221_123928

সেখানে সবাই সবাইকে চেনে, অনেকটা যৌথ পরিবারের মত। সবকিছু সেখানে সাজানো-গোছানো। বাসা-স্কুল-হকি মাঠ সবকিছুই কাছাকাছি। বাচ্চারা হাসি-খেলা করতে করতে স্কুলে যায়, স্কুল থেকে মাঠে খেলাধুলা করে আবার বাড়ি ফিরে আসে। একদম নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ।

এরকম ঝামেলাহীন পরিবেশ সেখানকার বাচ্চাদের নিবিড়ভাবে পরিচর্যার সুযোগ এনে দেয়। তাদের শিক্ষক বা ক্লাব কোচ দেখা যায় তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। এজন্য সেখানে ছোটরা খুব সহজেই বড়দের সাথে মিশতে পারে এবং শেখার প্রক্রিয়াটা আরও মসৃণ হয়।

[আরও পড়ুনঃ- হকি ওয়ার্ল্ড লীগের শেষ, হকি সিরিজের শুরু ]

কিশোর বয়সী বাচ্চাদের উপর তারা যে বিষয়টির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় তা হল মজার জন্য খেলা। ছোটদের ক্লাবগুলোতে কোনো ধরনের ট্রেইনিং এর চাপ দেওয়া হয় না। তারা তাদের ইচ্ছা মত হকি স্টিক আর বল নিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। কোনো রুল নেই, কোনো বাঁধাধরা গেমপ্ল্যান নেই। বন্ধুদের সাথে সারা বিকেল হকি স্টিক নিয়ে মেতে থাকে আর দিন শেষে ওই বন্ধুদের সাথেই বাড়ি ফেরে। কোনো ধরনের স্কিল ট্রেইনিং বাচ্চাদের করানো হয় না, ফিজিক্যাল ট্রেইনিং তো নয়ই।

এমনটা করা হয় ছোট বাচ্চাদের ভেতরে হকির প্রতি ভালোবাসা ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্যই। ছোট বয়সেই যখন তাদের মধ্যে হকির প্রতি ভালোবাসাটা ঢুকে যায় পরবর্তিতে সেই ভালোবাসা হকির প্রতি প্যাশনে পরিণত হয়। এই প্যাশনই সেখানকার বাচ্চাদের বিশ্বমানের হকি খেলোয়াড় বানায়।

নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত হকি খেলোয়াড় টিউন-ডি-নুইয়ারকে আমরা সবাই চিনি। হকি ইন্ডিয়া লীগ মাতানো ও দুইবার অলিম্পিক গোল্ড মেডেলিস্ট এই খেলোয়াড় নয় বছর বয়সে হকি খেলা শুরু করেন। মজার কথা হচ্ছে তিনি ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে দুই ঘন্টার বেশি হকি খেলেনই নি!

তিনিও এই পরিবেশে বড় হয়েছেন।

মূল বিষয়টা হচ্ছে এখানে খেলার প্রতি ভালোবাসা। বাচ্চারা যত মজা পাবে তত তারা নিজেদের ভেতরে সেই প্রেরণাটা খুঁজে পাবে।

[আরও পড়ুনঃ যুব অলিম্পিক গেমসঃ ভবিষ্যতের পাথেয় ]

যখন এই শিশুরা কৈশোরে পা দেয় তখন তাদের শুরু হয় হকির আসল ট্রেইনিং। তখন তারা হকির পেছনে আরও বেশি সময়, আরও বেশি শ্রম দেয়। আসল প্রতিযোগিতা শুরু হয়, নিজেদের প্রমাণ করার সময় তখন তাদের চলে আসে। নিজেদের প্যাশনকে তারা প্রফেশনে পরিণত করার জন্য মাঠে নেমে পড়ে। হকিকে তখন তারা আর মজার জন্য খেলা হিসেবে নেয় না। পারিপার্শ্বিকতার কারনে একটা সামাজিক মর্যাদার ব্যাপারও তখন চলে আসে। কারণ তারা দেখে তাদের আশেপাশের বড়রা হকিতে প্রতিষ্ঠিত।

হকি ক্লাবরা তখন হাই পারফরমেন্স প্রোগ্রাম শুরু করে। কৈশোরে বাচ্চাদের নিজেদের প্রমাণের প্রথম সুযোগ আসে কাতালান অ-১৫ দলে ঢোকার মাধ্যমে। কেউ সুযোগ পা, কেউ পায় না। কিন্তু তাই বলে তারা দমে যায় না। নিজেদের প্রমাণের সুযোগ খুঁজতে থাকে এবং নিজেদের সেরা প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লাগে।

এই ধরনের সামাজিক ব্যবস্থাই এই প্রদেশকে এত সাফল্য এনে দিয়েছে, এজন্যই এই প্রদেশ থেকে এত বড় বড় হকি স্টার উঠে এসেছে।

Self Pass  ব্লগ অবলম্বনে।