• ফুটবল

দ্যা টিটে সিস্টেম

পোস্টটি ৪২৮৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ব্রাজিল বনাম জার্মানি, বিশ্বকাপ ২০১৪, স্কোর লাইন সব ব্রাজিল ভক্তের মনে থাকার কথা, এর পরে স্কলারিকে চেঞ্জ করে আনা হয় দুঙ্গা কে, কিন্তু তাতেও ফায়দা হলো না কিছু, তারপরে ২০১৬ সালে আনা হলো ২৭ বছর বয়সে হাঁটুর ইনজুরির জন্যে ফুটবলের খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করা টিটেকে, আর সে আসার পরই পুরো ব্রাজিল যেনো খেলায় ফিরে পেলো প্রাণ, কি আছে টিটের সিস্টেমে সেটারই পোস্টমর্টেম করার একটা চেষ্টা চালাবো আগামী কয়েকটা মিনিট,

ফরমেশন--
প্রতিটা কোচেরই নিজস্ব প্রিয় ফরমেশন থাকে, টিটের বেশি ব্যবহৃত ফরমেশন হচ্ছে ৪-২-৩-১ , কিন্তু এই ৪-২-৩-১  দেখে যদি প্রতিপক্ষ ভাবে যে ব্রাজিল ৪-২-৩-১ এই খেলবে তবে তারা টিটের পাতা প্রথম ফাঁদে নিজেদের পা গলাবে, কাগজে কলমে যা ৪-২-৩-১ মাঠে টিটের কল্যাণে সেটিই হয়ে যায় ৪-৩-৩, কিন্তু এটি অন্যান্য কোচের মত ৪-৩-৩ নয়, টিটের ৪-৩-৩ তে দুই জন সিবির একটু উপরে দুই ফুলব্যাক থাকে, টিটে তার ফুলব্যাক ব্যবহার করে এটাক করতে পছন্দ করেন, আর যে টিমে মার্সেলো, আলভেস, ফেলিপে, দানিলো দের মত ফুলব্যাক থাকে তাদের ব্যবহারের সব থেকে ভালো উপায় তাদের অফেন্সিভ মাইন্ডসেটকে কাজে লাগানো, মিডফিল্ড প্রতিপক্ষ অনুযায়ী ত্রিভুজ আকার ধারণ করে, যদি প্রতিপক্ষ অল আউট এটাক অথবা খুনে কাউন্টার এটাক মানসিকতা সম্পন্ন হয় তবে দুই সিবির একটু উপরে দুইজন সেন্ট্রাল/সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিড আর উপরে একজন এটাকিং মিড থাকে, আর যদি মিড থেকে এটাক সাজানো টিম হয় তবে একজন ডিফেন্সিভ মিড এবং তার একটু উপরে বামে ও ডানে দুইজন এটাকিং মিড খেলে, আর এটাকে দুই উইঙে দুই উইঙ্গার আর একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড, এটাই মূলত তার ফরমেশন।

এটাক বিল্ডআপ--
টিটে এটাক বিল্ডাপ করার জন্যে তার নিজের হাফ মানে ব্রাজিলের হাফ থেকে খেলাটা শুরু করে এবং বিল্ডআপ এর জন্যে দুই উইং এর উইঙ্গার এবং ফুলব্যাকদের ব্যবহার করে, ফুলব্যাক থেকে আসা লোফটেড পাস উইঙ্গার রিসিভ করে, এখানে বলে রাখা ভালো টিটে লেফট উইঙ্গার মনে নেইমারকে কেন্দ্র করে খেলা সাজায়, এবং দুই উইঙ্গার দের মধ্য থেকে নেইমারই ডায়োগোনাল রান নিয়ে বক্সের দিকে এগিয়ে যায়, এতে করে অপোজিশন ডিফেন্স নেইমার এর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তার থেকে বল রিকোভার করতে নিজেদের পজিশন ছেড়ে বেরিয়ে আসে, এর ফলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সে সৃষ্টি হয় স্পেস, নেইমার তখন তার সবচেয়ে কাছে থাকা উইঙ্গার/ফরোয়ার্ড/মিডফিল্ডারকে থ্রু পাস/লব পাস দেয় এবং বক্সে তখন গোল কিপার এর সাথে যিনি বল হোল্ড করেন তিনি ওয়ান অন ওয়ান ব্যটলে নামেন এবং গোল করার চেষ্টা করেন অথবা করানোর চেষ্টা করেন, অপর দিকে অন্য আরেকজন যে উইঙ্গার থাকেন টিটে তাকে বেশ খানিকটা নিচে নেমে খেলার পারমিশন দিয়ে দেন, এতে করে তাকে ফলো করতে অপোজিশন ফুলব্যাক বেশ উপরে উঠে আসে এবং ওই ফুলব্যাক এর ফেলে আসা স্পেসকে কাজে লাগিয়েও ব্রাজিল এটাক করে। টিটে বিল্ডআপ এর জন্যে ছোট/বড় দুই রকমের পাসই ব্যবহার করেন।

ডিফেন্স--
খেলতে হলে এটাকের সাথে সাথে প্রতিপক্ষের এটাক প্রতিরোধও করতে হয়, এজন্যে টিটের প্রথম পছন্দ ফ্রন্টলাইন প্রেসার এবং হাই প্রেসিং হাই প্রেসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের বিল্ডআপ রুখে দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি এবং সেখান থেকে কাউন্টার এটাক করান, এছাড়া যেহেতু তিনি ফুলব্যাকদের উপরে উঠার পার্মিশন দিয়ে দেয়ায় ডিফেন্সিভ মিড দিয়ে তাদের ফেলে আসা স্পেস পূরণ করেন, ডিফেন্সিভ মিড বিশেষ করে ক্যাসিমিরোকে তিনি একটি জায়গায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং ক্যাসি ওই লাইনের বেশি উপরে উঠে না, প্রতিপক্ষের এটাক ফেইস করার সময় তার পজিশন থাকে সিবি এবং লেফটব্যাকদের/রাইটব্যাকদের মাঝখানে, এর ফলে তারা সহজেই ওভারল্যাপ করার সুযোগ পায়।

মূলত এটাই হল দ্যা টিটে সিস্টেম, এর উপরই দাঁড়ানো বর্তমান ব্রাজিল।