• ফুটবল

ব্রাজিলের মেক্সিকো বধ পোষ্ট ম্যাচ এনালাইসিস

পোস্টটি ৪০৯০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ব্রাজিল বনাম মেক্সিকো লড়াইটা দুই দলের খেলোয়াড় দের থেকেও বেশি হয়েছে দুই দলের কোচের মধ্যে, দেখা যাক দুই দলের লাইনাপ কেমন ছিলো, কার স্ট্র্যাটেজি কি ছিলো।

ব্রাজিল এর লাইনাপ কাগজে কলমে ছিল ৪-২-৩-১ কিন্তু আমি আগে টিটের এনালাইসিস এর সময় বলেছিলাম এই ৪-২-৩-১ দেখে যদি কেউ মনে করে ব্রাজিল ৪-২-৩-১ খেলবে তাহলে সে ভুল করবে , মাঠে ব্রাজিল কাল ৪-৩-৩ এবং ৪-১-৪-১ এই দুইটা ফরমেশন ব্যবহার করেছে এটাকের জন্য, আর এখানেই ছিলো আসল খেলা, একটা দল এর স্ট্রাইকার দের  যদি তার মিডফিল্ড থেকে আলাদা করে দেয়া যায় তবে তাদের আক্রমণের ধার অনেক কমে যায়, মেক্সিকোর ফরমেশন ছিল ৪-৩-৩ এবং তারা এই ফরমেশন মেইনটেন করেছে, জার্মানির সাথে তারা যে ট্যাকটিকস ব্যবহার করেছে ঠিক সেইম ট্যাকটিকস কাল তারা ব্যবহার করেছে,  তাদের ৩ জন ফরোয়ার্ড সব সময় উপরে থাকতো কারণ যেকোনো সময় মিড থেকে ভার্টিক্যাল পাস আসলে তারা তাদের স্পিড কাজে লাগিয়ে কুইক ট্রানজিশন এর মাধ্যমে আক্রমণ করবে, এর ফলে মিডে থাকতো তিন জন ,ফলে ব্রাজিলের ৪ জন মিড দিয়ে তৈরি ওয়ালের সামনে তাদের ৩ জন মিড বার বার অকেজো হয়ে যাচ্ছিলো, জার্মানি এই জায়গাতেই মেক্সিকোর কাছে হেরে গিয়েছিল কিন্তু ব্রাজিল এই জায়গাতে পারফেক্ট ছিলো, এই গেলো ব্রাজিলের এটাকের অবস্থা, ব্রাজিল ডিফেন্ড করার জন্যে গতকাল ৫-৪-১ ফরমেশন ব্যবহার করেছে, যে কয়বারই ডিফেন্ড করার প্রয়োজন ছিলো সে কয়বারই ক্যাসেমিরো ডিফেন্স লাইনে ড্রপ করে ৫ জনের একটা ফ্ল্যাট ডিফেন্স লাইন তৈরি করছে, এ জন্যে মেক্সিকোর পক্ষে ড্রিবল করে বল নিয়ে বক্সে ঢোকা বেশ কঠিন ছিলো, এছাড়াও আরেকটা ডিফারেন্স ছিল জার্মানি আর ব্রাজিলের মধ্যে, জার্মানির ফুলব্যাকরা পুরোটা সময়ই এটাক করতে সাহায্য করেছে কিন্তু কাল ব্রাজিলের ফুলব‍্যাকরা নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া এটাকে যায় নি, এমন কি কর্নার কিক থেকে যাতে কুইক কাউন্টারে গোল না খেতে হয় সে জন্যে কাল সিলভা মিরান্ডারা কর্ণারের সময় মেক্সিকোর বক্সেও যায় নি, এ জন্যে ব্রাজিল বেশ সলিড একটা ডিফেন্স পেয়েছে, এই একই কাজ মেক্সিকোও করেছে কিন্তু এই জায়গাতেই নেইমার পার্থক্য গড়ে দিয়েছে, নেইমার এর বড় শক্তিই হচ্ছে কুইক ডায়াগোনাল রান, প্রথম গোলের এর মেইন কারিগর হচ্ছে নেইমার এর রান, তার ডায়াগোনাল রানের ফলে আলভারেজ তাকে ফলো করতে শুরু করে এবং এর ফলে লেফট ফ্ল্যাংকে স্পেস তৈরি হয়, আর এই ফাঁকা স্পেস কাজে লাগিয়ে উইলিয়ান আরেকটি ডায়াগোনাল রান নেয় এবং বক্সের মধ্যে একটি লো ক্রস করে, ওচোয়ার উইকনেস হচ্ছে ক্রস, এই ফায়দা তুলেই প্রথম গোল আদায় করে নেইমার। এই গোলের পর মেক্সিকো গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে যায়, বার বার ব্রাজিলের হাফে তারা যাওয়া শুরু করে এবং কুইক ট্রানজিশনের মাধ্যমে গোল করার চেষ্টা করে, কিন্তু তারা এটা করতে গিয়ে ব্রাজিলের হাফে বল হারায় এবং কুইক কাউন্টারের মাধ্যমে গোল দেয় ব্রাজিল, আর এখানেও ডিফেন্সিভ ভুল করে আলভারেজ, নেইমারকে অফ সাইড ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করতে গিয়ে সে নেইমারকে ছেড়ে দেয় কিন্তু তার আগে উপরে আরো দুইজন ডিফেন্ডার ছিলো সেটা আর তিনি খেয়াল করে নি। কালকের জয়ের জন্যে টিপের ম্যান ম্যানেজমেন্ট এর প্রশংসাও করতে হয়, নেইমার অলরেডি একটা হলুদ কার্ডে ছিলো, তার উপর লিউন এর সাথে বার বার তার সমস্যা হচ্ছিলো, এই অবস্থা দেখে টিটে জেসুস কে লেফট ফ্ল্যাংকে নিয়ে আসেন, আর নেইমারকে জেসুসের পজিশনে সোয়াপ করেন, কারণ কোনো কোচই চাবেন না তার দলের সেরা খেলোয়াড় একটা ম্যাচ সাসপেন্ড হোক বা কোয়ার্টার ফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ স্টেজে খেলার আগে ইনজুরি গ্রস্ত হোক।

সবশেষে কথা একটাই কাল টিপের ট্যাকটিকস আর প্লেয়ার দের ভালো পারফর্ম  দুটো একসাথে ক্লিক করেছে, না হলে জার্মানির যে দশা হয়েছিল ব্রাজিলের তেমন হতে পারতো।