• ফুটবল

গ্যারেথ সাউথগেট, দ্যা মাস্টারমাইন্ড বিহাইন্ড ইংল্যান্ড টিম

পোস্টটি ২২৪৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ইংল্যান্ড এই কিছু সময় আগেই সুইডেনকে হারিয়ে নিজেদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে, এর পেছনে খেলোয়াড়দের সাথে দলের কোচ সাউথগেটের অবদানও কম নয়, ইংল্যান্ড ২০১৬ ইউরোতে বেশ বাজে ভাবে বিদায় নেয়, আর তারপরই কোচের ভূমিকায় আসেন সাউথগেট, তিনি ২০১৩ থেকে ইংল্যান্ডের অনুর্ধ ২১ দলের কোচ ছিলেন এবং সেখানে তার ম্যাচ উইনিং রেট ছিল প্রায় ৮২% । বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ড তার অধীনে ১৮ ম্যাচ খেলে হেরেছে মাত্র ২ টি, আর বিশ্বকাপে একটি ম্যাচই হেরেছে, কি উপায়ে তিনি ইংল্যান্ড দলকে এমন চেঞ্জ করলেন আগামী কিছু মিনিট তারই পোস্টমর্টেম করার চেষ্টা করবো।

ফরমেশন, ট্যাকটিকস এবং প্লেইং স্টাইল - 

সাউথগেট কিছুটা হুয়ান কার্লোসের মত, বিশ্বকাপের আগে তিনিও প্রতি ম্যাচে আলাদা আলাদা ফরমেশন ট্যাকটিকস ব্যবহার করেছেন, বিশ্বকাপে এসে ৩-৫-২ এ থিতু হয়েছেন, খাতা কলমে এটা ৩-৫-২ হলেও মাঠে এটা দাড়ায় ৩-৩-২-২ এ, এর প্রধান কারণ হলো ইংল্যান্ডের তেমন ভালো কোনো ডিপ লায়িং মিডফিল্ডার নাই যে খেলাটা ডিপ থেকে বিল্ডআপ করতে পারবে বা কি পাস এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষ ডিফেন্স চিরে ফেলবে, যেমনটা মড্রিচ ক্রুস কিংবা পগবা করে থাকে, যদিও ইয়াং, লোফটেস, ওয়েলব্যাক এরা বেশ ভালো করছে এবং অনেকেই এদের উপর ভরসা রাখছেন, হেন্ডারসন পিভোট হিসেবে খেলে এবং মিডফিল্ড এরিয়াতে বলের সাথে সাথে সে থাকার চেষ্টা করে, এই বিশ্বকাপে বেশির ভাগ কোচই অপোজিশন বক্সে ওভারলোড করার জন্যে উইংব্যাক বা ফুলব্যাকদের কাজে লাগাচ্ছেন, সাউথগেট এর ব্যতিক্রম নন, দুই উইংব্যাক কে দিয়ে তিনি এটাকের সময় পিচের ওয়াইড এরিয়া কাভার করান, আর এই ফরমেশন এর জন্যে ৪ জন খেলোয়াড় সবসময় সেন্ট্রাল পজিশনে থাকে এবং প্রতিপক্ষের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করে, তাদের সাহায্য করে দুই উইংব্যাক ওয়াইড এরিয়া থেকে, মোদ্দাকথা ইংল্যান্ড ৬ জন খেলোয়াড় নিয়ে এটাক করে, বল বক্সের কাছাকাছি চলে এলে স্টার্লিং বল ফলো করে এবং বল যেখানে থাকে সেখানেই থাকার চেষ্টা করে, স্টার্লিং ফ্রি রোলে খেলে থাকেন, নিচ থেকে বিল্ডআপ করার সময় নিচে চলে যান আবার দরকার হলে ডিফেন্সে সাহায্য করেন, সাউথগেট খেলাটা নিজেদের হাফ থেকে বিল্ড করতে পছন্দ করেন, এক্ষেত্রে তিনি স্টোনস এর বল প্রভাইডিং এবিলিটি কাজে লাগান, এইজন্যেই তিনি স্টোনসকে ডিফেন্সের একেবারে মিডেলে খেলান এবং এই এবিলিটির জন্যে পেপ স্টোনসকে সিটিতে আনতে চেয়েছিল, সেট পিসের সময় ইংল্যান্ডের মূল টার্গেট থাকে কেইন এবং ম্যাগুয়ের, এদের এরিয়াল এবিলিটি কাজে লাগিয়ে গোল আদায়ের চেষ্টা চালায়, এ তো গেল এটাক বা অন দ্যা বলে সাউথগেটের ট্যাকটিকস, অফ দ্যা বলে তিনি ৫-৩-২ ফরমেশন ধরে রাখতে বলেন তার দলকে, এতে করে ডিফেন্সে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় পাওয়া যায়, প্রতিপক্ষের হাফে বল হারালে ইংল্যান্ড প্রেস করে বল ফেরত পাবার জন্যে এবং মিডফিল্ড ব্যাটল এড়ানোর জন্যে, যদি প্রেস সফল না হয় তবে তারা ৫-৩-২ এ মেইনটেন করে এবং শুধু মাত্র ওয়াইড এরিয়াতে প্রেস করে প্রতিপক্ষকে এক সাইডে আটকে ফেলতে চায়, এসময় সাউথগেট জোনাল মার্কিং ব্যবহার করেন যাতে প্রতিপক্ষ কুইক কাউন্টার এটাক না করতে পারে, আর ৫-৩-২ এর ফলে প্রতিপক্ষের পাসিং লাইন বন্ধ হয়ে যায়, এর ফলে বেশ ভালো একটা ডিফেন্সিভ শেইপ পেয়ে যায় সাউথগেটের দল।

অন্যান্য ইংল্যান্ড টিমের থেকে এবারের দলটি অনেক বেশি ম্যাচিউরড, তাদের টিম কেমিস্ট্রি বেশ ভালো, আর তাদের অনেকেই অনুর্ধ ২১ এ সাউথগেটের অধীনে খেলেছেন, তারা কোচকে বেশ ভালোভাবে চেনেন এবং কোচ তাদের এবিলিটি এর ব্যাপারে জানেন,সুতরাং এই দলটি যদি ষাটের দশকের পর আবার বিশ্বকাপ হাতে পায় তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না